বাইবেল র্যাপচার সম্পর্কে কি বলে?
লেখকঃ- এসো বাইবেল শিখি/ শিখুন।
বাইবেল নূতন নিয়মে এমন একটি ঘটনার কথা বলে, যেখানে ঈশ্বরের ধৈর্য্য পাপী মানুষদের প্রতি শেষ হয়ে যাবে। তখন নোহের সময় মতো ঈশ্বর পাপী মানুষদের দণ্ড দিবেন। তখন এই জগতে প্রলয় তো আসবে না কিন্তু “সাত বছরের জন্য মহাক্লেশ হবে।” যেই “মহাক্লেশকাল” খ্রিষ্টের বিরোধী শাসকের আগমন থেকে শুরু হয়ে যাবে। সেই সময় ঈশ্বরের ক্রোধ মানুষের উপরে বর্ষিত হবে। যেমন নূহের সময় হয়েছিল, যত লোক নোহের কথা বিশ্বাস করে জাহাজে প্রবেশ করেছিল। আর যারা অবিশ্বাস করে জাহাজে প্রবেশ করেননি, যখন সেই জল প্লাবণ আসে তখন সকলে বিনষ্ট হয়ে যায়। ঠিক তদ্রুপ, বাইবেলের নূতন নিয়মে এক অলৌকিক ও আশ্চর্যজনক ঘটনা সম্পর্কে কথা বলে যেই ঘটনা ইতিহাসে এর পূর্বে বা পরে হয়নি যাকে বাইবেলে র্যাপচার (Rapture) বলা হয়, চলুন এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা যাক।
Photo by Jessica Mangano on Unsplash |
র্যাপচার (Rapture) এই শব্দটি বাইবেলে কোথাও উল্লেখ নেই। এই শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Rapio থেকে আগত। গ্ৰীক ভাষায় (ἁρπάζω- harpazo)যার কথার অর্থ হল “দ্রুত বা জোরালো বহন করে নিয়ে যাওয়া” মানে কয়েক সেকেন্ড তুলে নেওয়া হবে। বাইবেল এমন একটি সময়ের কথা বলে, যখন পৃথিবীতে লোক জীবন্ত ঈশ্বরের কাছ থেকে অনেক দূর হয়ে যাবে। মানুষ ভোগ বিলাসের, ধন-দৌলত, গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড, খেলাধুলায়, নানা কাজে, যৌনক্রিয়া, ডিস্কোবার , মদ্যপানে, মানুষের তৈরি আচার-অনুষ্ঠানে ইত্যাদি ইত্যাদি মধ্যে হারিয়ে যাবে, অর্থাৎ তখন এই জগতে নানা ধরনের আমোদ-প্রমোদ, মনোরঞ্জন চলতে থাকবে। জগত পাপের মধ্যে মাতিয়ে থাকবে, কেউ সেই জীবন্ত ঈশ্বরকে খুঁজার চেষ্টা করবে না, যে এই জগতের সৃষ্টিকারী কে ছিলো? মানুষ পাপের মধ্যে মাতিয়ে থাকবে সেই সময় সমগ্ৰ জগতে পাপ থেকে মন পরিবর্তন করার জন্য ঈশ্বর শুভ সুসমাচার ও প্রচার হবে। কিন্তু মানুষ এতোটাই বেপরোয়া হয়ে যাবে যে, কেউ সেই জীবন্ত ঈশ্বরকে গ্ৰহণ করতে চাইবে না। বাইবেল শিক্ষা দেয় তখন ঈশ্বরের ধৈর্য্য শেষ হয়ে যাবে, আর ঈশ্বরের ক্রোধ পৃথিবীতে বর্ষিত হবে। কিন্তু ঈশ্বরের ক্রোধ পৃথিবীতে বর্ষিত হওয়ার পূর্বে, যতজন নিজের পাপ স্বীকার করে, প্রভু যীশুর বলিদান উপরে বিশ্বাস করে, প্রভু যীশুকে একমাএ উদ্ধারকর্তা হিসেবে গ্ৰহণ করবে, তখন তাঁদের বিদ্যুৎ গতি থেকে অধিক দ্রুত গতিতে আকাশে তুলে নেওয়া হবে, যেখানে প্রভু যীশু আকাশে থাকবেন। আকাশে বিশ্বাসীদের সঙ্গে প্রভু যীশুর দেখা হবে আর প্রভু যীশু সকল প্রকৃত বিশ্বাসীদের স্বর্গে নিয়ে যাবেন একেই র্যাপচার বলা হয়।
মনে রাখবেন, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যখন র্যাপচার (Rapture) সময় আসবেন, তা কিন্তু প্রভু যীশুর দ্বিতীয় আগমন নয়। অনেকে আবার এখানে গুলিয়ে ফেলেন যে এটা প্রভু যীশুর দ্বিতীয় আগমন বলে! আপনাদের জানিয়ে রাখি তা কিন্তু নয়। এটা প্রভু যীশুর দ্বিতীয় আগমন হবে না। প্রভু যীশুর দ্বিতীয় আগমন তখন হবে যখন এই জগতে “সাত বছরের জন্য মহাক্লেশ হবে।” যেই “মহাক্লেশকাল” সম্পর্কে চিন্তা করলে গায়ে লোম শিউরে উঠবে। মানে এমন ভয়ঙ্কর কষ্ট হবে যা মানুষ কখনও চিন্তা করতে পারেনি। তারপর প্রভু যীশু খ্রীষ্ট এই জগতে আসবেন এই বাক্যের অনুরূপ (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১১-২১) র্যাপচার (Rapture) হওয়ার পূর্বে যত ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে তা প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে যেমন কিছু ভবিষ্যদ্বানী সম্পর্কে বাক্যে যথা; (মথি ২৪:৫-৭, ১ তীমথিয় ৪:১, ২ তীমথিয় ৩:১-৫)।
বর্তমান দিনে এই সকল বাক্যের কথা প্রায় প্রতিফলিত হয়ে থাকে। বাইবেল হিসেবে অন্তিমে দিনের ভবিষ্যতবাণী প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে, তার মানে র্যাপচার (Rapture) যে কোন মুহুর্তে হতে পারে। বর্তমান দিনে খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীরা কি র্যাপচার (Rapture) উপরে বিশ্বাস করে জীবন অতিবাহিত করছে কি! যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যেকোন মুহূর্তে আমাদের নিতে আসবে। আমাদের যীশু কাজে ব্যস্ত থাক উচিত, নাকি জাগতিক কাজে মধ্যে ডুবিয়ে থাকি, যেমন অবিশ্বাসীরা করে থাকে। একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী এই ভাবে বিশ্বাস করে জীবন অতিবাহিত করছে কি? অবিশ্বাসী লোককে এই র্যাপচার (Rapture) নিয়ে বললে দেখবেন অনেক লোক হাসি-ঠাট্টা করে থাকে যে, ওই র্যাপচার -টেপচার কোন কিছু হবে না। এটা বাচ্চাদের মতো মন ভুলানোর কথা। দেখা ও গেছে এমন অনেক খ্রিষ্টীয় রয়েছে যাঁরা এই র্যাপচার সম্পর্কে গুরুত্ব নয়। এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায় তবে র্যাপচার কি আদৌও হবে? এর উত্তর অবশ্যই র্যাপচার হবে যেমন বাক্য শিক্ষা দেয়; (১ থিষলকীয় ৪:১৩-১৮)।
সুতরাং র্যাপচার অবশ্যই হবে। এই র্যাপচার বা আকাশে তুলে নেওয়ার মধ্যে থাকবে অনন্তকালের জন্য আমাদের দেহকে ঠিক রাখতে, এই দেহের তাৎক্ষণিক রূপান্তরীকৃত হবে। আকাশে তুলে নেওয়া অর্থাৎ র্যাপচার (Rapture) মতবাদটি পুরাতন নিয়মে শিক্ষা দেওয়া হয়নি। এজন্য পৌল এটিকে ‘নিগূঢ়তথ্য’ (গুপ্ত সত্য) বলে আখ্যায়িত করেছেন যা এখন প্রকাশিত হয়েছে যথা; (১করিন্থীয় ১৫:৫১-৫৩)।
অনেকে বলে থাকে না যে, ঐ র্যাপচার-টেপচার কোন কিছু হবে না। র্যাপচার কেন হয়নি তার উওর হলো; ঈশ্বর চায় না যে, তাঁর সৃষ্টি সেই উওম জিনিস মানে মানুষ নরকে নিক্ষিপ্ত হয় বলে! তিনি চান সকলে খ্রিষ্টকে বিশ্বাস করে গ্ৰহণ করে উদ্ধার পায়, তাই তিনি সময়ের অধিক মানুষকে মন পরিবর্তন করার সময় দিয়েছেন যেমন বাক্যে ও বলে; (২ পিতর ৩:৯, ১ তীমথিয় ২:৪)। র্যাপচার বা আকাশে তুলে নেওয়া হলো; একটি মহিমাপূর্ণ বিষয় যার জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই ইচ্ছা বা আকাঙ্খা থাকা উচিত। আমরা চিরকালের জন্য ঈশ্বরের উপস্থিতিতে থাকব, তাই বাইবেল খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের জেগে থাকতে বলেছে যথা; (মথি ২৪:৪২, মথি ২৫:১৩ SBCL)।
ঈশ্বর সকলকে আশীর্বাদ করুন।।
0 মন্তব্যসমূহ
আপনাদের কিছু প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই
আমাদের জানান।
ধন্যবাদ ।