বাইবেল গাজার সম্পর্কে কি বলে?
লেখকঃ এসো বাইবেল শিখি/ শিখুন।
এই শিরোনাম দেখে, হয়তো অনেকে এটি বলতে পারেন যে, এটি আবার কি ধরনের শিরোনাম হল কি! যে বাইবেল গাজার সম্পর্কে কি বলে! এই বিষয় নিয়ে বাইবেল ভিওিক বিস্তারিত ভাবে জানতে সম্পূর্ণ লেখা পড়ার অনুরোধ থাকবে অর্থাৎ সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ুন। তাহলে পাঠকেরা চলুন লেখাটি পড়ি।
By Palestinian News & Information Agency (Wafa) in contract with APAimages, CC BY-SA 3.0 |
বর্তমান দিনে আপনার হয়তো ইস্রায়েল বা ইজরায়েল/ ইসরায়েল/ ইসরাইল যাই বলতে পারেন আর হামাস, হামাস যা মুলত গাজা উপত্যকায় বসবাসকারী। যারা নিজেকে ফিলিস্তিনের ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে বলে থাকে, তো তাদের আর ইসরাইল মধ্যে চরম সংঘর্ষ চলছে, যেখানে খুনখুনি-হানাহানি ও একদম চরম পর্যায়ে চলে গেছে। এই নিউজ কমবেশি সবাই জানেন, কারণ বর্তমান হল সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ বা দিনকাল। ইসরাইল আর হামাস মধ্যে কি চলছে তা এখানে আর এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ভাবে তো বলা হয়েছে না। এই বিষয় জানতে নিউজ পোর্টালে চোখ রাখুন। অবশ্যই মনে রাখবেন, আমাদের এই ছোট একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকল পাঠক পাঠিকাদের সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে যে, গোদী মিডিয়া নিউজ পোর্টাল থেকে দূরে থাকবেন। কারণ গোদী মিডিয়া পক্ষপাতিত্ব নিউজ করে বেড়াচ্ছে। এই গোদি মিডিয়ার প্রতি বিশ্বস্ত রাখা যাবে না।
বাইবেলে “গাজা” শব্দটি প্রায় ১৮ বার এসেছে, যেখানে পুরাতন নিয়মে ১৭ বার উল্লেখ রয়েছে এবং নতুন নিয়মে ১ বার উল্লেখ রয়েছে। গাজা মুলত হিব্রু নাম (আজ্জাহ - עַזָּה) গ্ৰীক ভাষায় ও একই বলা হয়। আমাদের বাংলা অনুবাদ বাইবেল তা বাংলাদেশের কেরী ভার্সন হোক বা ভারতবর্ষের O.V (BSI) ভার্সন হোক তাতে “গাজা” শব্দটি দেখতে পাওয়া যায় না। এই দুই ভার্সনে “ঘসা” শব্দটি দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু হ্যাঁ বাংলাদেশের বাংলা (SBCL) অনুবাদ ভার্সন যা মুলত 2000 সালে অনুবাদিত করা হয়, সেখানে “গাজা” শব্দটি দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া ভারতবর্ষের CL Bible 2016 (BSI) এবং IRV (ভারতীয় সংশোধিত সংরক্ষণ - বাংলা, 2019) উভয় অনুবাদিত ভার্সনে বাংলা বাইবেলে “গাজা” শব্দটি দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া অধিকাংশ ইংরেজি ভাষায় অনুবাদিত বাইবেলে “গাজা” শব্দটি উল্লেখিত রয়েছেই।
বাইবেলে প্রথমবার “গাজা” শব্দটি আদিপুস্তকে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে গাজা শহরটি কনানীয়দের সীমান্ত শহর হিসেবে উল্লেখ রয়েছে উদাহরণ স্বরূপ এই বাক্যে দেখুন যথা; ভারতবর্ষের অনুবাদ (আদিপুস্তক ১০:১৯ ENGALCL-BSI, আদিপুস্তক ১০:১৯ RVBen), এবং বাংলাদেশের অনুবাদ (আদিপুস্তক ১০:১৯ SBCL), ইংরেজি অনুবাদ (Genesis 10:19 KJV), গাজা শহরটি মূলত ভূমধ্যসাগরের তীরে ইসরাইলের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে যা ইসরাইল ও মিশরের (Egypt) সীমান্তে অবস্থিত। খ্রিস্টপূর্ব দ্বাদশ শতাব্দীতে ফিলিস্তিনরা বা পলেষ্টীয়রা যাই বলতে পারেন, তারা যখন গাজা দখল করে নেয়। তার আগে গাজা মিশর দ্বারা দখল করা হয়েছিল এবং সাড়ে তিনশ বছর শাসন করেছিল। ফিলিস্তিনরা (পলেষ্টীয়রা) অস্কিলোন, অসদোদ,ইক্রোণ, এবং গাৎ সহ তাদের পাঁচ ভূপালের শহরের মধ্যে একটি শহর গাজা'কে বানিয়েছিল। গাজা বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির মধ্যে একটি। গাজা নামের অর্থ হলো; “উগ্র বা শক্তিশালী”।
ফিলিস্তিন বা প্যালেস্টাইন বা পলেষ্টীয় যাই বলতে পারেন, গাজা তাদের সাথে যুক্ত একটি শহর ছিল। কিন্তু আদি বাসিন্দা মূলত, অব্বীয়রা গাজায় বাস করত, পরে কপ্তোরীয়রা তাদের বাস্তুচ্যুত করে শহরে বসতি স্থাপন করেছিল উদাহরণ এই বাক্যে দেখুন যথ; (দ্বিতীয় বিবরণ ২:২৩ BCV)। কপ্তোরীয়রা ফিলিস্তিনি বা পলেষ্টীয়ের উপজাতি হিসেবে ধরা হয় তারাই অব্বীয়দের বাস্তুচ্যুত করেছিল। যিহোশূয় সময় ইস্রায়েল বা ইজরায়েল কাদেশ-বর্ণেয় থেকে গাজা (ঘসা) এবং গোশন এলাকা, থেকে শুরু করে গিবিয়োন পর্যন্ত জয়লাভ করেছিল যেমন এই বাক্যে সুস্পষ্ট ভাবে বলে যথা; (যিহোশূয় ১০:৪১ SBCL)। ভূমি বিভাজনে এটি অর্থাৎ গাজা যিহূদার অংশে পড়ে যথা; (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১:১৮ BENGALCL-BSI)। যাইহোক, তারা অর্থাৎ ইসরায়েল ফিলিস্তিনীদের তাড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছিল, তাই ফিলিস্তিনীরা গাজা সহ তাদের পাঁচ ভূপাল শহরের বসবাস ও শাসন করতে থাকে। এবং শিমশোনের বিচারের সময় পর্যন্ত ফিলিস্তিনিরা গাজায় বাস করত এবং নিয়ন্ত্রণ করেছিল (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১৬:১)। এছাড়াও শমূয়েলের সময় ফিলিস্তিনিরা গাজা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে যেমন এই বাক্যের অনুরূপ বলা যায়; (১ শমূয়েল ৬:১৭ CL)।
পরে শৌল ও দায়ূদের রাজত্বের অধীনে, ফিলিস্তিনিরা পরাজিত হয়েছিল যাতে পরবর্তী রাজা শলোমন ফরাৎ বা ইউফ্রেটিসের পশ্চিমের সমস্ত অঞ্চল, তিপসহ থেকে গাজা (ঘসা) পর্যন্ত, ইউফ্রেটিসের পশ্চিমের সমস্ত রাজাদের উপর কর্তৃত্ব করেছিলেন। তখন তার চারদিকে শান্তি ছিল যেমনটি এই বাক্যে বলে; (১ রাজাবলি ৪:২৪)। পরে, রাজা হিষ্কিয় প্যালেস্টাইনদের গাজা ও তার অঞ্চল পর্যন্ত, প্রহরীদুর্গ থেকে সুরক্ষিত শহর পর্যন্ত ধ্বংস বা আঘাত করেছিলেন যথা ; (২ রাজাবলি ১৮:৮ IRV)। তাই গাজা একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল যা পলেষ্টীয় এবং ইস্রায়েলীয় শাসনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ছিল। ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক যুদ্ধের কারণে, ঈশ্বর গাজা শহরের জন্য ভবিষ্যৎ দাতাদের মাধ্যমে বিচার এবং ধ্বংসের বিষয়ে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যেমন বাক্যে সুস্পষ্ট ভাবে বলে যথা; (আমোষ ১:৬-৭, সখনিয় ২:৪, সখরিয় ৯:৫-৭, যিরিমিয় ২৫:১৭-২৯)।
অশূরিয়া বা আসিরিয়া যাই বলতে পারেন রাজা “সার্গন” গাজা জয় করেছিলেন, এবং সম্ভবত ৭২০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে এটি ধ্বংস করেছিলেন। তারপর মিশরীয় নিয়ন্ত্রণ (যিরমিয় ৪৭:১), তারপর পারস্য, তারপর “আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের” অধীনে গাজা দখল করে। পরে রোমানরা গাজা শহর জয় করার আগে সেলেউসিড সাম্রাজ্য সেখানে শাসন করেছিল। এবং ম্যাকাবিয়ান সময়কালে, যনাথন গাজাকে ইস্রায়েল অধীন করেছিলেন। এছাড়া আমরা বাইবেলের নূতন নিয়মে গাজা (ঘসা) সুসমাচার প্রচারের সাথে যুক্ত একটি শহর হিসেবে দেখি যথা; (প্রেরিত ৮:২৬ SBCL)। যেখানে আমরা সুস্পষ্ট ভাবে দেখতে পাই, ঈশ্বরের এক দূত, ইথিয়পিয়ার এক ব্যক্তি যিনি কান্দাকি রাণীর অধীন, উচ্চপদস্থ একজন নপুংসক ছিলেন। যাকে ঈশ্বরের সুষমাচারের বার্তা শোনার জন্য ফিলিপকে মনোনীত করা হয়েছিল। পরে সুসমাচার শুনে সেই ইথিপিয় ব্যক্তিকে বাপ্তিস্ম দিয়েছিলেন।
বাইবেল মূলত ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে গাজাকে যুক্ত করে। ঈশ্বর সেই নগরটি যিহূদাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ইস্রায়েলীয়রা কনানের পূর্বে থেকে বসবাসকারী অধিবাসীদের তাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের বাধ্য হতে ব্যর্থ হয়েছিল যেমন; (গণনাপুস্তক ৩৩:৫১-৫৩ CL)। সেই অবাধ্যতার কারণে, ফিলিস্তিনিরা এবং গাজা শহর কয়েক শতাব্দী ধরে ইস্রায়েলের পক্ষে কাঁটা স্বরুপ হয়ে যায় (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ২:৩)। বর্তমানে, গাজা শহর, যেখানে প্রধানত মুসলমানরা বাস করে, গাজা উপত্যকার অংশ হিসাবে ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের হামাসের অধীনে রয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই গাজা প্রায়শই ইস্রায়েলের সাথে মতবিরোধের একটি শহর হিসাবে রয়ে গেছে। নিঃসন্দেহে বাইবেল গাজার সম্পর্কে যা ভবিষ্যৎবাণী করেছে তা একদিন সফল হবে।
ঈশ্বর সকলকে আশীর্বাদ করুন। আমেন।।
1 মন্তব্যসমূহ
আপনি খুব সুন্দর ভাবে বাইবেল আয়াত গুলো বিশ্লেষণ করেন যা খুব প্রশংসনীয় আমি আমার সম্পর্কে এতটুকু বলতে পারি আমি একজন নতুন বা যানছি। আমি আশাবাদী আপনি সবসময় বাইবেল ও মসীহ বাক্যকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু ভাবে প্রচার করবেন।
উত্তরমুছুনআপনাদের কিছু প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই
আমাদের জানান।
ধন্যবাদ ।