খ্রিস্টান মহিলারা কি মাসিকের সময় উপবাস করতে পারে?
লেখকঃ- এসো বাইবেল শিখি/ শিখুন।
এই বিষয়টি আমাদের প্রিয় বিশ্বাসী বোনদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এই বিষয় বস্তুটি প্রিয় খ্রীষ্ট ভাইদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয় তা কিন্তু নয়, অবশ্যই পুরুষদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখছি এই বিষয় বস্তু নিয়ে বিশ্বাসীদের মধ্যে নানা মতবাদ রয়েছে, কিছু পক্ষ বলে হাঁ উপবাস করতে পারে, আবার কিছু পক্ষ বলে নানা উপবাস করতে পারে না। উপবাস করা এটি অনুচিত বোঝায়, তখন তারা নানাভাবে ব্যাখা দিয়ে বসে। এখন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, তবে বাইবেল হিসেবে সঠিক অর্থে এর উত্তর কি হবে! খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসী মহিলাদের উপবাস করা উচিত কি নয়!
আলোচনা করার পূর্বেই সকলকে জানিয়ে রাখি বাইবেল উপবাস সম্পর্কে তেমন কিছু বলে না, একজন খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীকে উপবাস করতেই হবে বলে! অবশ্যই ঈশ্বর খ্রীষ্টিয়ানদের কাছে এটি তেমনভাবে দাবী করেন তো করে না, কিন্তু সাথে সাথে পবিত্র বাইবেল আবার এটিকে আমাদের জন্য লাভজনক বা উপকারী বিষয় হিসাবে উপস্থাপন করে থাকে যা এই পুস্তকের বাক্যে অনুসরণ করলে বোঝা যায়; (প্রেরিত ১৩:২, ১৪:২৩)। অবশ্যই এই ধরনের কিছু বাক্যে থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, হাঁ উপবাস করা যেতে পারে। যখন উপবাস করা হয় তখন অনেক খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসী নারী নানা প্রশ্নের মধ্যে সম্মুখীন হয়ে যায় তবে “আমি কি আমার মাসিকের সময় উপবাস করতে পারি?” বিশেষ করে নারীবাদী খ্রিষ্টানরা তারা সাধারণত যে বাক্য নিয়ে থাকে; (লেবীয় ১৫:১৯)। এই বাক্যে আদৌও কি বলে এই বিষয় নিয়ে একটি লেখা পূর্বেই পোস্ট করা হয়েছে দেখুন; “মেয়েদের মাসিকের সময় চার্চে যাওয়া উচিত কি?” এই বিষয় বস্তু যদি আপনি এখনও অনুসরণ করেননি তাহলে অবশ্যই অনুসরণ করবেন।
আমরা এখানে এই বাক্যের অর্থ কিছুটা বুঝিয়েছি আপনারা পড়ে নিতে পারেন। নারী বিদ্বেষী মনোভাব ব্যক্তিরা, তারা যেই বাক্যে সঙ্গ নেয় তা কখনও খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসী মহিলাদের উপরে প্রযোজ্য হয় না। কারণ সেই কথা লেবীয়দের বলা হয়েছিল নাকি খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের! আর নাই বা এই বাক্যে উপবাস সম্পর্কে কিছু বলে! নারী বিদ্বেষী মনোভাব ব্যক্তিদের মাধ্যমে যেই বাক্যের সাহায্য প্রমাণ করা হয়, মহিলাদের মাসিকের সময় উপবাস করা অনুচিত এই উওর যথার্থ নয়। এখন বলবেন সঠিক উত্তর কি? উপবাস করা যাবে কিনা? আপনাদের বলি হাঁ হতে পারে আবার নাও হতে পারে। এখন আপনারা বলবেন এটা আবার কেমন ধরনের উওর হলো; হাঁ ও হতে পারে, আর নাও হতে পারে। মনে মনে উদ্বিগ্ন হয়ে যাচ্ছেন উওর পড়ে। দেখুন উদ্বিগ্ন হবে না আমরা বিস্তারিত ভাবে বোঝাব এর হাঁ উওর আর না উওরের পরিভাষা কি বলে!
উওর হাঁ এর জবাবঃ নারী বিদ্বেষী মনোভাব ব্যক্তিদের হিসাবে যেই বাক্যে উওলোন করে, তা হলো নারীদের মাসিকের সময় অশুচি নিয়ে। সেই বাক্যের হিসেবে তাঁরা বলে; যেহেতু মাসিকের সময় নারীরা অশুচি থাকে তাই উপবাস করা অনুচিত। এই কথার হিসাবে প্রভু যীশু সেই নারী বিদ্বেষী মনোভাব ব্যক্তিদের একটি উদাহরণ দিয়ে জবাব দিয়েছেন উদাহরণস্বরূপ এই বাক্যে দেখুন; (মথি ৯:২০-২২)। এই বাক্যেয় প্রভু যীশু পুরাতন নিয়ে পূর্ণতা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। পুরাতন নিয়মে যা ওই নারী বিদ্বেষী মনোভাব ব্যক্তিদের ও উওম বাক্যে যেখানে বলা হয়েছিল; মাসিক চলাকালীন সেই মহিলারা অশুচি থাকে। এখানে দেখুন সেই অশুচি স্ত্রী যে দীর্ঘদিন ধরে রক্তস্রাবে রোগে ভুক্ত ছিলেন, সে কি করে ছিলো বলে! যিনি ঈস্রায়েলের ঈশ্বর যাঁহাকে “মশীহ” বলা হয় (যিশা ৭:১৪, মথি ১:২১, যোহন ১:৪১) যাঁকে ঈশ্বরের পুএ বলা হয় (মথি ১৪:৩৩, মার্ক ৩:১১, লুক ১:৩৫, যোহন ১:৩৪) যাঁকে ঈশ্বর ও বলা হয় (যোহন ১:১,১৪) যিনি আলফা এবং ওমিগা, আদি ও অন্ত (প্রকা ১:৮, ২১:৬, ২২:১৩, যিশাইয় ৪৪:৬, ৪৮:১২) সেই প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে স্পর্শ করে ছিলেন। এখানে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বিরোধ করতে তো পারতেন কিন্তু করেননি। কারণ তিনিই ব্যবস্থার পরিপূর্ণ ছিলেন। সেই মশীহ, ঈশ্বরের পুত্র, ঈশ্বর, আলফা এবং ওমিগা, আদি ও অন্ত ঈশ্বর এক নতুন কিছু সূচনা করতে চলেছিলেন।
এখানে লেবীয়দের, শুচি ও অশুচি প্রথা ছিলো তা সমাপ্তি করে দিয়েছেন। এখন সেই পরম পবিত্র স্থানে প্রবেশ করার অনুমতি সকলে দিয়েছেন, যা পূর্বে লেবীয়দের সেই বর্ষের মহা যাজকদের অনুমতি ছিলো। তিনি সেই বিচ্ছেদ বড় পর্দা ভেঙ্গে দিয়েছেন। এখন খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করে গ্ৰহণ করলেই আপনি ঈশ্বরের মন্দির হয়ে যান (১ করি ৬:১৯) যা থেকে প্রমাণিত হয় যে এখন শুচি আর অশুচি'র কোন কিছু নেই। শুচি ও অশুচি বহু বাক্যে দ্বারা প্রমাণিত করা যায়। পুরাতন নিয়মে একজন মহিলা তার মাসিকের সময় অশুচি ছিল, কিন্তু নতুন নিয়মে এই ধরনের একজন মহিলা ঈশ্বরের কাছে শুচি এবং ধার্মিক। যীশু খ্রীষ্টে, আমরা একটি নতুন চুক্তির অধীনে আছি, এবং আমরা তাঁর রক্ত দ্বারা শুদ্ধ হয়েছি। এবং আমাদের ধার্মিকতা তাঁর কাছ থেকে আসে৷ খ্রীষ্টে আমাদের নতুন বিশ্বাসে, যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল আমাদের আধ্যাত্মিক অবস্থার বিশুদ্ধতা, এবং এটি আমাদের শারীরিক শরীরের উপর নির্ভর করে না।
কিন্ত নারী বিদ্বেষী মনোভাব খ্রিষ্টানরা এই কথা মানতে নারাজ, তারা উল্টো বলে। তারা আবার মাঝে মাঝে (মথি ৫:১৭) পদের বাক্যের দিকে ও চলে যায়, যেকোন অবস্থায় এটাই প্রমাণিত করতে চায়, যে মেয়েদের মাসিকের সময় উপবাস করা অনুচিত। আমরা পূর্বেই সুস্পষ্ট হয়েছি, মাসিকের সময় মহিলারা অশুচি হয় না। সুতরাং এর মানে হল যে একজন মহিলা প্রার্থনা করতে পারেন, উপবাস করতে পারেন, বাইবেল পড়তে পারেন বা গির্জায় যেতে পারেন। কারণ আমরা আমাদের আত্মায় ঈশ্বরের সাথে সংযোগ স্থাপন করি। সুতরাং এই আলোচ্য ভিওিকে এটি প্রমাণিত যে, খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসী মহিলাদের মাসিকের সময় উপবাস করতে পারে।
উওর না জবাবঃ মাসিক চলাকালীন একজন মহিলার বেশ কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। প্রত্যেক নারীকে এই সময় শারীরিক ও মানসিক কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অনেক ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এর মধ্যে আছে তলপেটের অতিরিক্ত ব্যথা, খিটখিটে মেজাজ, মাথা ঘোরানো, অ্যাসিডিটি, মুখের অরুচি, বমি বমি ভাব, অস্বস্তিবোধ ইত্যাদি। মাসিক দিনগুলোতে রক্তক্ষরণের কারণে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। এই আয়রন বা লৌহের স্বল্পতা ঘাটতির ফলে শরীর ক্লান্তি দুর্বলতা হয়ে থাকে। এমনিতে উপবাস করার সময় ও শরীর দুর্বল হয়ে যায়, অতিরিক্ত সময় ধরে খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকলে তা আমাদের শরীরের ক্ষতির কারণ হতে পারে। উপবাস থাকার মানে শরীরকে শাস্তি দেওয়ার মত কোন অভিপ্রায় নয়, যদি কেউ এটা চিন্তা করে যে, আমি আমাকে ক্ষুধিত রেখে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করব সেই বিশ্বাসী মহিলার এটি ভুল ধারণা। এই ভাবে উপবাস করা কোন মহত্ত্ব রাখে না। শরীরকে কষ্ট দেওয়া নানা ধর্মের বিশ্বাস্বাবলম্বীদের মাধ্যমে দেখতে পাওয়া যায়। তারা তাদের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করে থাকে। কেউ আবার জ্বলন্ত আগুনের মাধ্যমে চলাচল করে থাকে। তারা তাদের ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার জন্য, অবশ্যই মাসিকের এই অবস্থায় উপবাস না করলেই ভালো হয়। এই অবস্থায় আপনাকে আপনার শরীরের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে, সমস্যা ডবল করা উচিত নয়। ঈশ্বরের মন্দির স্বয়ং আপনি, তাই সেই মন্দিরকে যত্ন করে রাখা তা আপনারই দায়িত্ব। তা বলে এটি নয় যে, আমরা আপনাকে নিরুৎসাহিত করছি তা কিন্তু নয়। অনেক খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসী মহিলারা বলতে পারে আমি বিশ্বাসে দৃঢ় রয়েছি, আমি উপবাস করব, নিশ্চয় আপনি করতে পারেন।
উপসংহারঃ আমরা বাইবেল আলোকে জেনেছি, রক্তের সমস্যায় আক্রান্ত স্ত্রীলোকটি যখন যীশুর পোশাক স্পর্শ করেছিল, তখন সে সুস্থ হয়েছিল। সেই স্ত্রী যখন যীশুকে স্পর্শ করে ছিলো, তখন যীশু অশুচি হননি কারণ তাঁর নিরাময় করার ক্ষমতা ছিল, এবং তিনি একটি নতুন চুক্তি প্রতিষ্ঠা করতে এসেছিলেন। এই ঘটনার আমরা যা দেখতে পাই তা হল, রক্তের সমস্যায় আক্রান্ত মহিলা অবাধে যীশুর কাছে যেতে পারে। এবং আজকাল তাদের মাসিক হওয়া মহিলারাও তা করতে পারে। তাই আপনার মাসিকের সময় উপবাস রাখা কোন পাপ নয়। সুতরাং আপনি আপনার শরীরের জনিত উপবাস করতে চান কিনা তা আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার, কোনো নারী বিদ্বেষী মনোভাব খ্রিষ্টান আপনাকে হুকুম দিতে পারে না। কিন্ত মনে রাখতে হবে উপবাস হতে হবে নম্রতার আত্মায় ও আনন্দপূর্ণ মনোভাবে নিয়ে লোক দেখানো নয়।
ভিডিও দেখুন 👇
ঈশ্বর সকলকে বুঝার মত জ্ঞান প্রদান করুন।
আমেন।।
0 মন্তব্যসমূহ
আপনাদের কিছু প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই
আমাদের জানান।
ধন্যবাদ ।