বাইবেল শিশুদের বাপ্তিস্ম সম্পর্কে কি বলে?
লেখকঃ- এসো বাইবেল শিখি/ শিখুন।
আপনারা হয়তো দেখেছেন, ভিন্ন ভিন্ন মন্ডলীতে নবজাতক শিশুদের বাপ্তিস্ম দেওয়া হয়। বিভিন্ন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে বাপ্তিস্ম নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে। যারা নবজাতক শিশুদের বাপ্তিস্ম দেয়। তারা বাস্তবে বাইবেলের বাক্য হিসেবে চলে না। নিজেকে খ্রিস্টান বলে দাবী তো করে কিন্তু বাস্তবে কোন খ্রিস্টান নয়। কোথায় বলতে গেলে নাম মাএই খ্রিস্টান। যাইহোক, এটি বাইবেল বাপ্তিস্মের বিষয়ে একটি বিভ্রান্তিকর বার্তা উপস্থাপন করার ফলাফল নয়। বাপ্তিস্ম কী, এটি কার জন্য এবং এটি কী অর্জন করে সে সম্পর্কে বাইবেল প্রচুর পরিমাণে পরিষ্কার।
Photo by Josh Applegate on Unsplash |
নবজাতক শিশুদের বাপ্তিস্ম দেওয়ার নিয়ে বাইবেলে কোন আজ্ঞা দেওয়া হয়নি। বাপ্তিস্ম শব্দ মূলত গ্ৰীক βαπτίζω-baptizó এসছে যার অর্থ হল জলে ডোবানো। বাপ্তিস্ম মানে খ্রীষ্টকে পরিধান করা অর্থাৎ যীশুখ্রীষ্টকে গ্রহণ করা। বাপ্তিস্ম প্রতীক হল ভিরতের পরিবর্তনকে বাইরে প্রদর্শন করা বা বিশ্বাস কে প্রদর্শন করা। শিশুদের বাপ্তিস্ম দেওয়া উচিত কিনা তা সম্পর্কে জানতে আমরা এই বাক্য দেখি যথা; (মার্ক ১৬:১৬)। এখানে প্রভু যীশু স্পষ্ট ভাবে বলেছেন; যে বিশ্বাস করে আর বাপ্তিস্ম নেয়। সুতরাং বাপ্তিস্ম নেওয়ার একটাই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করা। আপনি কেন কিসের জন্য বাপ্তিস্ম নিচ্ছে তা জানা প্রয়োজন। আপনাদেরকে জিজ্ঞাসা করি শিশুরা কি উদ্ধার, পাপ, বলিদান এই সব বিষয়েকে নিয়ে কিছু বুঝতে পারে? উওর হবে নিশ্চয় না কারণ শিশুরা এই সব কিছুই বুঝতে পারে না। সাধারনতঃ শিশুদের বিশ্বাসকে ও বোঝানো সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই যতক্ষন না তাদের সঠিকভাবে সুসমাচার ও বাপ্তিস্ম নিয়ে জ্ঞান হয়, ততক্ষন তাদের বাপ্তিষ্ম নেওয়া/ দেওয়া উচিৎ নয়। আপনি হয়তো দেখেছেন শিশুদেরকে কি ভাবে বাপ্তিস্ম দেওয়া হয় বলে। তা জল (পানি) ছিটিয়ে/ ঢেলে। বাপ্তিষ্ম মানে সম্পূর্ণ জলে ডোবানো নাকি জল ছিটিয়ে/ ঢেলে।একদিন কি হয়েছে যখন প্রভু যীশু যোহনের দ্বারা বাপ্তিস্ম নিতে আসলেন। তখন যোহন প্রভু যীশুকে কি বললেন? এই বাক্যে দেখুন; (মথি ৩:১৪)।
সেই যোহন যে নিজেকে কিছুরই যোগ্য মনে করত না। তিনি বলতেন যিনি আমার পরে আসছেন তাঁর আমি পায়ে জূতা/ চটি বোওয়ার মতো লোক ও নই। এত নিজেকে যোগ্য বলে মনে করতেন না। তিনি যখন সেই খ্রিষ্ট যিনি জগতের পাপ ভার লয়ে যান। সেই খ্রিষ্টকে যখন তাঁর কাছে বাপ্তিস্ম নিতে আসছেন তখন যোহন স্পষ্ট রুপে প্রভু যীশুকে বারং করছেন যে, আপনার দ্বারা তো আমারই বাপ্তিস্ম নেওয়া উচিত। কিন্তু আপনি আমার কাছে বাপ্তিস্ম নিতে এসছেন! কোথায় বলতে গেলে যোহন হতভম্ব হয়ে গেছিলেন যে, এটা কি করে সম্ভব! তখন প্রভু যীশু যোহনকে কি বললেন, এই বাক্যে দেখুন; (মথি ৩:১৫)। এখানে প্রভু যীশু যোহনকে বলছেন যে, এখন সম্মত হও, কেননা এইরূপে সমস্ত ধার্ম্মিকতা সাধন করা আমাদের পক্ষে উপযুক্ত। অর্থাৎ প্রভু যীশুর বলছেন, যখন কারোর বাপ্তিস্ম নিয়ে সব কিছু ধারণা হয়ে যায়।
বাপ্তিস্ম কেন নেওয়া হয় বলে!তখন তার বাপ্তিস্ম নেওয়া উচিত/ উপযুক্ত। হয়তো এখানে আপনি বলবেন কই এই বাক্যতে আপনার ব্যাখা হিসেবে কোন কথা তো উল্লেখ নেই। আপনি মন গড়া ব্যাখা দিয়েছেন। প্রিয় আপনাকে বলি হুট করে কোন বাক্য বোঝা যায় না। আপনাকে সেই বাক্য বারবার হাজার বার প্রার্থনা পূর্বক উপর নিচ, বাক্যের সংঘর্ষ পড়তে হবে তবেই আপনি বুঝতে পারবেন। সুতরাং স্বয়ং প্রভু যীশু উদাহরণ স্বরূপ আমাদের বুঝিয়ে ছিলেন কখন বাপ্তিস্ম নেওয়া উচিত বলে। প্রভু যীশু তো স্বয়ং ঈশ্বর ছিলেন। তিনি তো বাপ্তিস্ম নিয়ে সব কিছুই জানতেন। তিনি চাইলে শৈশবে বাপ্তিস্ম নিতে ও পারতেন। কিন্তু নেননি কারণ এই জগতে মানুষের শরীর ধারণ করে এসছিলেন। মানুষ হিসেবে যা করা প্রয়োজন ছিল। তিনি মানুষ রুপি হয়ে প্রত্যকটি করেছেন। তিনি মানুষ হয়ে খেয়েছেন, ঘুমিয়েছেন, কেঁদেছেন। তিনি বাপ্তিস্ম নিয়ে বাপ্তিস্ম মর্ম ও বুঝিয়েছেন।
বাপ্তিস্ম যে কেউ নিতে পারে। যদি কেউ পাপ, বলিদান, উদ্ধার এই সব নানা প্রশ্নের উওর জেনেছেন। যীশুকে মন থেকে আপনার একমাএ প্রভু ও উদ্ধারকর্তা বলে স্বীকার করে নিজের জীবন যীশুকে দিয়ে দিয়েছে। সুসমাচারের বিশ্বাস করেছে, মন ফিরিয়েছে সে বাপ্তিষ্ম নিতে পারেন যেমন এই বাক্য বলে যথা; (প্রেরিত ২:৪১)। এই বাক্যয় আমরা দেখতে পাচ্ছি পিতরের সুসমাচারে শুনে অনেকে বিশ্বাস করল। বিশ্বাস করে সেই দিন তাহারা বাপ্তিস্ম নিল। এখানে থেকে প্রমাণিত হয় বাপ্তিস্ম বিশ্বাসের ফলে নেওয়া হয়। একদিন কি হয়েছে! ইথিওপিয়া দেশের এক ব্যক্তি ছিলেন। যিনি কান্দাকি রানীর সমস্ত উচ্চ পদস্থ এক ধনকোষের অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি একদিন যিরুশালেম এ আরাধন করার জন্য এসছিলেন। তিনি ফিরার পথে যিশাইয় ভাববাদীর পুস্তক পাঠ করছিলেন। কিন্তু কিছু বুঝতে পারছিলেন না, সেই সময় পবিত্র আত্মা ফিলিপকে বল তুমি যাও সেই রথের সঙ্গ ধর। যখন ফিলিপ কাছে এসে শুনলেন যে, তিনি যিশাইয় ভাববাদীর পুস্তক পড়ছেন।
তখন সেই অধ্যক্ষকে জিজ্ঞেসা করলেন, আপনি যেই বাক্য পড়ছেন তা কি বুঝতে পারছেন? তখন সেই অধ্যক্ষ বলল কেউ যদি আমায় না বোঝায় তো কেমন করে বুঝতে পারব? তিনি (যিশাইয় ৫৩:৭-৮) পড়ছিলেন। তখন ফিলিপ সেই উচ্চ পদস্থ নপুংসককে সেই পুস্তক এর বাক্যের মর্ম বিস্তারিত বোঝান এবং প্রভু যীশুর সুসমাচার ও শুনিয়ে দেন। সুসমাচার শুনে সেই নপুংসক বিশ্বাস ও করেন। তখন নপুংসক ফিলিপকে কি বলেছিল এই বাক্যে দেখুন; (প্রেরিত ৮:৩৬)। কোন কোন প্রাচীন অনুলিপীতে এই খানে এই কথা পাওয়া যায় যে, তখন ফিলিপ তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যদি, সমস্ত অন্তঃকরণ সহিত বিশ্বাস করেন, তবে হইতে পারে। তাতে সেই নপুংসক উত্তর বলেছিলেন, যীশু খ্রীষ্ট যে ঈশ্বরের পুত্র ইহা বিশ্বাস করিতেছি। তখন ফিলিপ সেই নপুংসক কে বাপ্তিস্ম দিয়ে ছিলেন। এখানে ও আমরা দেখতে পাচ্ছি বিশ্বাসের ফলে বাপ্তিস্ম নেওয়া হয়েছিল।
ঠিক তদ্রুপ একদিন ফিলিপ যখন শমরিয়ার নগরে গিয়ে লোকদের কাছে খ্রিষ্টের সুসমাচার প্রচার করছিলেন। তখন ফিলিপ দ্বারা নানা অলৌকিক কার্য হচ্ছিল, অশুচি আত্মা লোকরা সুস্থ হচ্ছিল, খঞ্জ চলতে পারছিল, পক্ষঘাতী লোকরা সুস্থ লাভ করছিল এই রকম বহু অলৌকিক কার্য ফিলিপ দ্বারা হচ্ছিল। তখন অনেক লোক বিশ্বাস করে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন যেমন বাক্য বলে যথা; (প্রেরিত ৮:১২)। বাইবেল মন ফিরিয়ে বিশ্বাস করে বাপ্তিস্ম নিতে আজ্ঞা করা হয়েছে। বিশ্বাস করেই বাপ্তিস্ম নেওয়া/ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিশুদের কখনো বাপ্তিস্ম দেওয়া হয়নি। আর আজ্ঞা ও করা হয়নি। ভণ্ড প্রচারকরা বাইবেলে কিছু বাক্য নিয়ে বলে যে শিশুদের বাপ্তিস্ম দেওয়া হয়েছিল/ নিয়ে ছিল। উদাহরণস্বরূপ তারা এই বাক্যে নিয়ে থাকে; (প্রেরিত ১৬:১৫)।
এই বাক্যের হিসাবে ভণ্ড প্রচারকরা বলে দেখুন এখানে তো লেখা রয়েছে। তিনি ও তার পরিবার বাপ্তিস্ম নিল। ভণ্ড প্রচারকরা বলে পরিবার মানে শিশু সন্তানরা সকলেই থাকে। প্রথম আপনাদের বলি পরিবার মানে এটা নয় যে শিশু সন্তানরা বাপ্তিস্ম নিয়েছে বলে! সেখানে বয়স্ক প্রাপ্তদের কথা বলা হয়ে। শিশুদের নয়। আপনি যদি একটু আগের বাক্য পড়বেন মানে (প্রেরিত ১৬:১৪) সেখানে বুঝতে পারবেন কি বলা হয়েছে বলে! সেখানে একটি স্ত্রী লোকের কথা বলা হয়েছে। যখন পৌল সুসমাচার প্রচার করছিলেন তখন সেই স্ত্রী লোক তাদের কথা শুনছিল আর প্রভু সেই স্ত্রী লোকের হৃদয় ও খুলে দিলেন। সেই স্ত্রী লোক ও তার পরিবারের সহ প্রত্যেকে বিশ্বাস করে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। কিন্তু ভণ্ড প্রচারকরা বলে নানা সেখানে শিশুদের কথাই বলা হয়েছে। শিশুরা ও বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। তো প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায় প্রভু যীশুর যে (মার্ক ১৬:১৬) পদে বলেছিল যে বিশ্বাস করে আর বাপ্তিস্ম নেয় সে পরিএাণ পাবে। তার মানে সেই ভণ্ড প্রচারকের হিসেবে এটা বোঝায় যে, সাধূ পৌল প্রভু যীশুর বাক্য তিরস্কার করে শিশুদের বাপ্তিস্ম দিয়েছিল। আপনাদের বলি তা কিন্তু নয়। সাধূ পৌল কখনও প্রভু যীশুর কথাকে তিরস্কার করে শিশুদের বাপ্তিস্ম দেয়নি। সেই রকম হলে সম্পূর্ণ বাইবেল মিথ্যা প্রমাণিত হত। কিন্তু না বাইবেল চিরন্তন সত্য তা প্রমাণ ঈশ্বর বাইবেলেই দিয়েছেন যথা; (২ তীমথিয় ৩:১৬)।
বাইবেলের প্রত্যকটি বাক্য পরীক্ষা সিদ্ধ কোন ক্রটি নেই যেমন এই বাক্য ও বলে যথা; (গীতসংহিতা ১১৯:১৪০, গীতসংহিতা ১২:৬)। সুতরাং সাধূ পৌল কখনও প্রভু যীশুর কথা তিরস্কার করে শিশুদের বাপ্তিস্ম দেইনি। বাইবেল হিসেবে শিশুরা ধার্ম্মিকতা বাক্য নিয়ে বা খ্রীষ্টকে নিয়ে, এমনকি ভালো মন্দ কিছুই বিচার করতে পারে না যেমন বাক্য বলে যথা; (ইব্রীয় ৫:১৩)। এই বাক্যে হিসেবে শিশুদের ধার্ম্মিকতার নিয়ে জ্ঞান নেই। সুতরাং শিশুদের বাপ্তিস্ম দেওয়া উচিত নয়।
উপসংহারঃ শিশু বাপ্তিস্ম একটি বাইবেলের অনুশীলন নয়। একটি শিশু খ্রীষ্টে তার বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে না। একটি শিশু খ্রীষ্টের আনুগত্য করার জন্য একটি সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। জলের বাপ্তিস্ম কীসের প্রতীক তা একটি শিশু বুঝতে পারে না। বাইবেলে কোনো শিশুর বাপ্তিস্ম নেওয়ার রেকর্ড নেই। শিশু বাপ্তিস্ম হল বাপ্তিস্মের ছিটানো এবং ঢালা পদ্ধতির উত্স - কারণ এটি একটি শিশুকে জলের নীচে নিমজ্জিত করা বুদ্ধিমান এবং অনিরাপদ। এমনকি শিশু বাপ্তিস্মের পদ্ধতিও বাইবেলের সাথে একমত হতে পারে না। কিভাবে ঢালা বা ছিটানো যিশু খ্রিস্টের মৃত্যু, সমাধি এবং পুনরুত্থানকে চিত্রিত করে? শিশু বাপ্তিস্ম বাপ্তিস্মের বাইবেলের সংজ্ঞা বা বাপ্তিস্মের বাইবেলের পদ্ধতির সাথে খাপ খায় না।
ঈশ্বর সকলকে আশীর্বাদ করুন।
আমেন।।
0 মন্তব্যসমূহ
আপনাদের কিছু প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই
আমাদের জানান।
ধন্যবাদ ।