খ্রিস্টানদের কি চন্দ্রগ্রহণের ঐতিহ্য উদযাপন করা উচিত?
লেখকঃ- এসো বাইবেল শিখি/ শিখুন।
আজকের বিষয় বস্তু আমাদের খ্রিষ্টীয় নতূন বিশ্বাসী বর্গদের উদ্দেশ্য অনেক মহত্ত্ব রাখে। বিশেষ করে তাদের যারা অন্য কোন ধর্মের থেকে খ্রিষ্টীয়তে এসছেন। এবং যখন এই দিনটি আসে তখন তাদের মনে এই বিষয় নানা আনাগোনা হয় থাকে যে, এই দিন উদযাপন করতে পারব কিনা! যদি উদযাপন করি তাহলে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে আবার পাপ করছি না তো? আসুন এই বিষয়কে নিয়ে বিস্তারিত ভাবে জআনা যাক।
Photo by Benjamin Voros on Unsplash |
হিন্দুদের পৌরাণিক কথা আনুসারে বলা হয় একদিন অমৃতলাভের জন্য দেবতা ও দানবেরা সমুদ্রমন্থন করেছিল। এই মন্থনে ধন্বন্তরি অমৃতভাণ্ড হাতে উত্থিত হন। কিন্তু দানবরা লক্ষ্মী এবং অমৃতলাভের জন্য দেবতাদের সাথে কলহের সৃষ্টি করতে থাকে। এই সময় বিষ্ণু মোহনীয়া নারীর রূপ ধরে, দানবদের সম্মুখে এলে, দানবরা মোহিত হয়ে যায়। তখন অমৃতভাণ্ড নারীরূপী বিষ্ণুর হাতে তুলে দিলেন। এরপর দানবরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দেবতাদের আক্রমণ করে। এই অবসরে বিষ্ণু নরদেবকে সাথে নিয়ে অমৃতকুণ্ড নিয়ে পালিয়ে যান। আর দেবতারা বিষ্ণুর কাছ থেকে সেই অমৃত নিয়ে পান করেন। পরে রাহু নামক দানব। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে— রাহু দানব বিশেষ দানব বিপ্রচিত্তির ঔরসে ও সিংহিকার গর্ভে এঁর জন্ম হয়। এই অমৃত চুরি পান করতে গেলে চন্দ্র তা দেখে ফেলেন এবং বিষ্ণুকে তা জানিয়ে দেন। এরপর বিষ্ণু সুদর্শনচক্র দ্বারা রাহুর শিরোশ্ছেদ করেন। ফলে রাহুর শরীর দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। উপরে অংশকে অর্থাৎ মস্তকে রাহু বলা হয়, আর নিচের অংশকে অর্থাৎ শরীরকে কেতু বলা হয়। সেই থেকে চন্দ্র রাহুর চির শত্রুতে পরিণত হন। হিন্দুদের মতে চন্দ্র এক দেবতা। রাহুর অমৃতের লাভের ফলে এই কারণে, রাহু মস্তক অমর হয়ে যায়। এই কারণে রাহুকেতু প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মাঝে মাঝে চন্দ্র গ্রাস করা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু পেরে উঠতে পারে না কারন রাহুর শরীর তো ভূমিষ্ঠ ছিল। সুতরাং রাহু গিলে ফেললে আবার চন্দ্র বেরিয়ে যায়। হিন্দুদের মতে- এইভাবে চন্দ্র গ্রহণের ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে।
[সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব: অষ্টাদশ-ঊনবিংশ অধ্যায় থেকে গৃহীত] |
চন্দ্রগ্ৰহণ কি?
পৃথিবী নিজ কক্ষপথে আবর্তন করতে করতে যখন চাঁদ ও সূর্যের সরলরেখার মধ্যে চলে আসে, তখন পৃথিবীর ছায়ার পড়ে তখন চাঁদে সূর্যের আলো পৌঁছায় না, ফলে চাঁদকে তখন কিছু সময়ের জন্য দেখা যায় না। অর্থাৎ পৃথিবী পৃষ্ঠের কোন দর্শকের কাছে চাঁদ আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে কিছু সময়ের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়। তখন একে সংক্ষেপে চন্দ্রগ্রহণ বলে। যখন পৃথিবীর সূর্যকে সম্পূর্ণ ভাবে ঢেকে নেয় ফলে চাঁদকে সম্পূর্ণ রুপে দেখা যায় না তখন তাকে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ বলে। যখন পৃথিবীর সূর্যকে আংশিকভাবে ঢেকে রাখে ফলে চাঁদকে দেখা যায় না তখন তাকে আংশিক চন্দ্রগ্ৰহণ বলা হয়। যেহেতু পৃথিবীর ব্যাস চাঁদের ব্যাসের চেয়ে অনেক বেশি, তাই পৃথিবীর সমান ব্যাস ভ্রমণ করতে চাঁদের অনেক সময় লাগে।
চন্দ্রগ্ৰহণ সময় প্রচলিত কুসংস্কারঃ |
(১) চন্দ্রগ্রহণের সময় কোনো খাবার রান্না করা, খাবার খাওয়া বা জল/পানি পান করা উচিত নয়।
(২) “গর্ভবতী মহিলারা চন্দ্রগ্ৰহণ চলাকালিন ছুরি, কাঁচি বা অন্য কোন ধারালো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে নিষিদ্ধ, কোনো ধাতব অনুষঙ্গ বা গহনা ব্যবহার করা যাবে না।” এসব নিষেধাজ্ঞা না মানলে গর্ভস্থ শিশু ফাটা ঠোঁট বা ফাটা তালু নিয়ে জন্ম হবে এমন কুসংস্কার ভারত ও বাংলাদেশে প্রচলিত রয়েছে।
(৩) গ্রহণ শেষ হওয়ার পর গোসল/স্নান করতে হবে। বলা হয় যদি কোন অশুভ প্রভাব থাকে তা দূর হয়ে যাবে।
আমরা দেখলাম, চন্দ্রগ্ৰহণের সময় কি কি কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। আচ্ছা, বলুন তো ধরুন, চন্দ্রগ্ৰহণ দীর্ঘ ২-৩ ঘণ্টা হল, সেই সময় ও কি একজন গর্ভবতী মহিলাকে কিছু না খেয়ে থাকা উচিত। নিশ্চয়ই না। কারণ ওই মূহুর্তে কিছু অঘটন সন্তান হতেও পারে। তাছাড়া চন্দ্রগ্ৰহণ করার সময় ছরি, কাঁচি ব্যবহার করার ফলে যে সন্তানের কিছু হয়ে যাবে তাও কিন্তু নয়। এছাড়াও অশুভ শক্তি ভয়। আপনাদের জানিয়ে রাখি বিশেষ করে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের। জীবন্ত ঈশ্বর সদাপ্রভু যেখানে বাস করেন সেখানে শয়তান বা মন্দত্মা, অশুভ ছায়ার কোন প্রভাব পড়েই না। কারণ বাইবেল সুস্পষ্ট ভাবে বলে আমাদের প্রভু যীশুর সেই মন্দত্মা বা অশুভ শক্তি থেকে অনেক শক্তিশালী যথা; (১ যোহন ৪:৪)। সুতরাং ঈশ্বর/প্রভু যীশুই আমাদের অশুভ প্রভাব থেকে রক্ষা করবেন কোন গোসল-টোসল করে নয় মানে স্নান-টান করে নয়। একজন খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসী নারী কোন ভয় করা উচিত নয়। সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে আপনি বিন্দাস থাকতে পারেন। আপনাকে কোন গোসল টসোল বা স্নান টান করতে হবে না।
উপসংহারঃ - এই আলোচ্য থেকে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হলাম যে, এই চন্দ্রগ্ৰহণ একটি প্রাকৃতিক ঘোটনা যা বিজ্ঞান দ্বারা পুষ্টিকর হয়েছে। এখানে কিছু অন্ধ বিশ্বাস/ কুসংস্কার রয়ে। বাইবেল অন্ধ বিশ্বাস/ কুসংস্কার বিশ্বাস করে না। বাইবেল সত্যকে বিশ্বাস করে কোন রুপকথার কাহিনী নয় বা কুসংস্কার টসংস্কার নয়। বাইবেল তো স্পষ্টক্ষরে বলেছে, বাইবেল কি বলেছেন তা জানতে এই বাক্যে দেখুন যথা; (যোহন ৮:৩২)। অর্থাৎ এই বাক্যের মতোন আমরা স্বাধীনকৃত সত্যকে জেনে বিশ্বাস করব। কোন পরম্পরাকে নয় যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে সেটি উদযাপন করতে হবে তা কিন্তু নয়। তাছাড়া কোন পৌরাণিক কাহিনী শুনে ও নয়।
0 মন্তব্যসমূহ
আপনাদের কিছু প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই
আমাদের জানান।
ধন্যবাদ ।