যীশু যদি ঈশ্বর হোন, তাহলে তিনি কেন বলেছিলেন, “পিতা আমা অপেক্ষা মহান?” (যোহন ১৪:২৮)
লেখকঃ- এসো বাইবেল শিখি/শিখুন।
এই বাক্য নিয়ে বতর্মান দিনে সমালোচদের একটি জবরদস্ত দাবী। সমালোচকরা বলে যদি যীশুই তোমাদের ঈশ্বর ছিলেন, তবে তিনি কেন বলেছিলেন যে, পিতা আমা অপেক্ষা মহান? তখন তারা বাইবেলের ভুল ব্যাক্ষা দিয়ে প্রমাণ করতে চান যে যীশু কোন ঈশ্বর নয়। সমালোচকদের সমস্যা বোঝা যায় কারণ বাইবেলের নিগড় তথ্য বুঝতে গেলে পবিত্র আত্মার সহায়কাতা প্রয়োজন যেমন বাক্য বলে যথা; (১ করিন্থীয় ২:১৪ SBCL)।
Image by; freepik |
সমালোচকরা সর্বদা বাইবেলের পিছুনে লেগে পড়েই থাকে যে, কিভাবে বাইবেলকে মিথ্যা প্রমাণিত করা যায় বলে! কিন্তু সমালোচরা এটাও বারংবার ভূলে যান যে, বাইবেল মানবরচিত কোন পুস্তক নয়। এটি জীবন্ত ঈশ্বর সদাপ্রভুর লিখিত পুস্তক যথা; (২ তীমথিয় ৩:১৬, ২ পিতর ১:২০-২১)। যদি ঈশ্বরের ভূল হত, ঈশ্বর কি তা সংশোধন করতে পারতেন না? নিশ্চয় সংশোধন করতে পারেন। সমালোচকদের কষ্ট/ সমস্যা তো বোঝায় যায়। কারণ পবিত্র আত্মা সহায়ক না থাকলে বাইবেলের নিগড় তথ্য বোঝা সম্ভব নয়। আমরা সমালোচকদের প্রেম সহকারে বোঝাতেও চাই, কিন্তু দুঃখের ব্যাপার সমালোচরা আমাদের কথা শুনতেই নারাজ। সুতরাং তখন আমরা আর বোঝাতে সক্ষম হয়ে উঠতেও পারি না। আমরা দেখেছি এই বিষয়কে নিয়েও খ্রিস্টানদের মধ্যে বিভ্রান্তি হয়েই থাকে। কিছু নামধারী খ্রিস্টান আছে, যারা নিজেকে খ্রিস্টান বলে তো দাবী করে।
কিন্তু বাস্তবে তারা কোন খ্রিস্টান নয়। তারাও সমালোচকদের সঙ্গে একই তালে তাল মিলিয়ে বলে থাকে যীশু কোন ঈশ্বর নয়। সত্যি আমরা যখন এই সব কথা শুনি, তখন নিজেকেই অনেক খারাপ লাগে। আপনার খারাপ লাগে কি না তা আমরা জানি না। কিন্তু আমাদের খারাপ লাগে। প্রভু যীশু কেন বলেছিলেন পিতা আমা অপেক্ষা মহান? এই বিষয় উওর জানতে গেলে আপনাকে ট্রিনিটি ঈশ্বর সম্পর্কে একটু ধারণা থাকা দরকার, তবে বিষয় বস্তু বুঝতে সহজ হবে। সংক্ষেপে ট্রিনিটি ঈশ্বরের ধারণা দেওয়া হচ্ছে। ট্রিনিটি ঈশ্বর বলতে একের মধ্যে তিন স্বতা। আপনি বলবেন এই তিন স্বতা আবার কেমন? তিন স্বতা বলতে এক ঈশ্বরের মধ্যে তিন ব্যক্তি বিদ্যমান। এটা ঠিক যে, বাইবেলে ট্রিনিটি বলে কোন শব্দ পাওয়া যায় না। এখন আবার আপনার জিজ্ঞাসা চিহ্ন (?) দাঁড়িয়ে যেতে পারে, যদি বাইবেলে ট্রিনিটি শব্দ নেই তাহলে আপনারা এই শব্দ কোথায় থেকে পেয়ে গেলেন?
দেখুন আপনাকে স্পষ্ট করে দেই শব্দতে আমরা বিশ্বাস করিনা, ধারনাতে বিশ্বাস করি। ঈশ্বর বাইবেলে যেই ভাবে নিজেকে তিন স্বতায় প্রদর্শন করেছেন সেটাই বিশ্বাস করি। যেমন পিতা ঈশ্বর, পুএ ঈশ্বর, পবিএ ও আত্মা ঈশ্বর। মনে রাখবেন মাতা ঈশ্বর কিন্ত নয়। এই মাতা ঈশ্বর ভণ্ডামি খ্রিস্টানদের এক নতূন ঈশ্বর আবির্ভাব করিয়ে দিয়েছে। তিন স্বতা সর্বদা একই সাথে বিদ্যমান যথা এই সকল পুস্তকে দেখলে বোঝা যায়; (যিশাইয় ৪৮:১৬, মথি ৩:১৩-১৭,২৮:১৯, ২ করি, ১৩:১৪, ইফি ৩:১৪-২১, ২ থিষ ২:১৩ ১ পিতর ১:২)। তিন স্বতার মধ্য দ্বিতীয় ব্যক্তি এই জগতে মানব শরীর ধারণ করে আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে এসছিলেন। মানব শরীর যখন ধারন করে এই জগতে ছিলেন তখন স্বয়ং ঈশ্বর তো ছিলেন। সাথে একজন মানুষই ছিলেন। ঈশ্বর নিজেকে ঈশ্বরীয়দৈবিকতা ক্ষমতা থেকে শূন্য করেছিলেন যেমন এই বাক্য বলে যথা; (ফিলিপীয় ২:৬-৮)।
যীশু যখন নিজেকে ঈশ্বরত্ত্বের থেকে খালি করছিলেন, তখন তিনি একজন মানুষ ছিলেন। মানুষ হিসাবে যেমন আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন, ঠিক তদ্রূপ যীশুর ক্ষেত্রেও। যীশু মানুষ হিসেবে পিতার অধিনস্ত ছিলেন। তিনি সর্বদা পিতাকে অধিক মহত্ত্ব দিয়েছেন। যীশু যে বলেছিল পিতা আমা অপেক্ষা মহান। এখানে যে গ্ৰীক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা হল (μέγας-megas) যার অর্থ মর্যাদায় বড়, শক্তিশালী এবং উচ্চতর পিতা কার্যালয়ে পুত্রের চেয়ে মহান তা বলে যে যীশু ঈশ্বর ছিলেন না তা কিন্তু নয়। যীশুই ঈশ্বর ছিলেন যেমন বাক্য বলে; (যোহন ১:১, যোহন ৮:৫৮, যোহন ১০:৩০)। যীশু ১০০% মানুষ ছিলেন ১০০% ঈশ্বর ছিলেন যেমন বাক্যের বলে যথা; (কলসীয় ২:৯)।
যীশুতে দুই স্বভাব বিদ্যমান ছিল। এক মানবীয় স্বভাব, আর ঈশ্বরই স্বভাব। শুধু মানবীয় স্বাভাবে পিতার অধীনস্থ ছিলেন, তাই যীশু বলেছিলেন পিতা আমা অপেক্ষা মহান। যীশু এই উক্তিটি বলেছিলেন বলে ছোট, হীন হয়ে গেলেন তা কিন্তু নয়! মানে যীশু ঈশ্বর নয় তা কিন্তু নয়। আমরা এই বিষয়কে বোঝার জন্য একটি কাল্পনিক উদাহরণ দেই, যদি আপনার বুঝতে পারেন। ধরুন, আপনি বাজারে গিয়ে একটি বাঘের কাপড় কিনে আনলেন। এনে বাড়িতে এসে আপনি তা পরলেন। আচ্ছা আপনি বলুন তো! ওই বাঘ্রের কাপড় পরলে কি আপনি বাঘ হয়ে যাবেন কি? উওর নিশ্চয় না। আপনি বলবেন বাঘের কাপড় পরলে কেউ থড়ি না বাঘ হয়ে যাবে! মানুষ, মানুষ হয়েই থাকবে। আপনি যেমন বাঘের কাপড় করলে আপনি বাঘ হয়ে যাবেন, ঠিক তদ্রুপ ঈশ্বরের ক্ষেএে। ঈশ্বর নিজেকে মানুষের কাছে প্রদর্শন করার জন্য পুএ যীশুর মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করে শরীর ধারণ করেন (যোহন ১:১৪)। যীশু ঈশ্বর ছিলেন তা এই বাক্যের সাহায্য প্রমাণিত হয়; (যোহন ১:১৮)।
সুতরাং ঈশ্বর নিজেকে পুএ যীশুর মাধ্যমে শরীর ধারন করে প্রকাশ করেছেন। আচ্ছা আপনি বলুন তো উপরে যে, একটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছিল বিষয়কে বোঝানোর জন্য। এখানে যীশু কি ঈশ্বর নন? তিনি শরীর ধারন করলেন বলে কি ভিতর থেকে তিনি কি ঈশ্বর নন, মানে অন্য কিছু কি হয়ে গেলেন নাকি? যেমন বাঘের কাপড় পরে আপনি বাঘ হয়ে যাবেন না, ঠিক তদ্রুপ যীশু শরীর ধারণ করলেই যে, তিনি ঈশ্বর নন তা কিন্তু নয়। তিনি যেই কি সেই থাকবেন। জানি এই উদাহরণ যোগ্য নয়। তবুও উদাহরণ দেওয়া হয়েছে যেন আপনি বুঝতে পারেন। যীশু যে, ঈশ্বর ছিলেন সেই বিষয়কে বোঝানোর জন্য খুব সুন্দর একটি কথা বলেছিলেন। কি কথা বলছিলেন তা এই বাক্য দেখুন; (যোহন ১৪:৯ BERV)। এই বাক্যের সাহায্য ও প্রমাণিত হয় যীশু ঈশ্বর ছিলেন।
উপসংহারঃ- যীশু সম্পূর্ণরূপে ঐশ্বরিক। মানব প্রকৃতি গ্রহণ করে, যীশু তাঁর ঐশ্বরিক প্রকৃতি ত্যাগ করেননি। তাছাড়া ঈশ্বর হওয়া বন্ধ করতে পারে না। সারমর্মে, এর অর্থ হল যে যীশু স্বেচ্ছায় তাঁর ঐশ্বরিক গুণাবলী অনুশীলন করার বিশেষাধিকার ত্যাগ করেছিলেন। এবং পৃথিবীতে থাকাকালীন নিজেকে পিতার ইচ্ছার অধীন করেছিলেন। যীশু শুধুমাত্র মানবীয় শরীরের পিতার অধিন ছিলেন তাই তিনি বলেছিলেন পিতা আমা অপেক্ষা মহান। সমালোচক ও নাম ধারী খ্রিস্টানরা, যারা যীশুর দৈবিকতা উপরে প্রশ্ন তুলেন, তাদের উদ্দেশ্য প্রভু যীশুর চেতনা বাক্য ও এই বিষয় বস্তুর উপসংহার বাক্য যথা; (যোহন ৮:২৪)। হ্যাঁ, এই বাক্যে পরিস্কারভাবে বলে যীশুই ঈশ্বর ছিলেন।
0 মন্তব্যসমূহ
আপনাদের কিছু প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই
আমাদের জানান।
ধন্যবাদ ।