স্বর্গের রাণী কে?
লেখকঃ এসো বাইবেল শিখি/ শিখুন।
আমরা দেখেছি এই বিষয় নিয়ে বিশেষ করে রোমান ক্যাথলিক, মরিয়মকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে গেছে যা ভাষায় ও বলা সম্ভব নয়। কারণ বাক্যেয় মরিয়মকে “প্রভুর মা” হিসেবে বলা হয়েছে, এটি থেকে তারা এই সিদ্ধান্তে চলে যায় যে তিনি একজন রাণী, যেহেতু তিনি একটি পুত্রের জন্ম দিয়েছেন, এবং ইহুদি ঐতিহ্য অনুসারে যীশু রাজা তারা মরিয়মকে রাণী মা করে তোলে। চলুন মরিয়ম আদৌও কি স্বর্গের রাণী ছিলেন কিনা তা বাইবেল ভিওিক দেখি।
বাইবেলে “স্বর্গের রাণী” শব্দটি যিরমিয় পুস্তকে দেখতে পাওয়া যায়। স্বর্গের রাণী কথা দুটি ঘোটনায় দেখতে পাওয়ায়। প্রথমটি হল ইস্রায়েল জীবন্ত ঈশ্বরকে ছেড়ে অন্য দেবতাদের উদ্দেশ্য নৈবেদ্য উৎসর্গ করে ঈশ্বরকে অসন্তোষ করাত। তখন ঈশ্বর যিরমিয় ভাববাদীকে কি বলছিলেন এই বাক্য দেখুন; (যিরমিয় ৭:১৭-১৮)।
এখানে ইংরেজি অনুবাদ KJV Translation “Queen of Heaven” উল্লেখ করা হয়েছে যার অর্থ হলো; “স্বর্গের রাণী” এই “স্বর্গের রাণী” বাইবেল অশূর ও ব্যাবিলীয়দের দেবী আষ্টরোৎকে বোঝানোর হয়েছে। আষ্টরোৎ অশূর ও ব্যাবিলে দেবী ছিল। যাকে মিথ্যা দেবতা বাল দেবের স্ত্রী বলে ও মনে করা হয়। অষ্টারোৎ দেবী অন্য ধর্মের মহিলারা পূজা করত। অষ্টারোৎ দেবীর অনেক বিশ্বস্যনীয় ছিল যাকে উর্বর দেবী হিসাবে ও বলা যায়। অর্থাৎ সেই যুগে মহিলাদের শিশুদের জন্মদান অত্যন্ত একটি দেবী। দুঃখের ব্যাপার এটা যে ইস্রায়েলদের মধ্যে এই দেবী অনেক প্রচলিত হয়ে উঠল। আর অন্য ধর্মের লোকদের দেখে দেখে তারাও ওই দেবীকে পূজা করতে শুরু করে দেয়। আর ইস্রায়েল সেই আষ্টরোৎ দেবীকে “স্বর্গের রাণী” বলে ডাকতে শুরু করে দেয়। “স্বর্গের রাণী” দ্বিতীয় ঘোটনাটি যিরমিয় ভাববাদীর পুস্তকেই লিখিত রয়েছে, যেখানে যিরমিয় ভাববাদী ইস্রায়েলদের ঈশ্বরের মাধ্যমে সতর্ক করতেন যে, অন্য দেব-দেবীদের মূর্তি পূজা করে ও ঈশ্বরের আজ্ঞা উলঘন করেছো ফলে ঈশ্বর তোমাদের উপরে অসন্তুষ্ট হয়ে ক্রোধের বশত এর পূর্বে নানা দণ্ড ও দিয়েছেন। যদি এখন ও পাপ থেকে মন না ফেরাও তবে ঈশ্বর এর থেকে আরও কঠিন কঠিন বিপত্তি নিয়ে আসবেন। কিন্তু কি হল উল্টো যিরমিয় ভাববাদীকে ইস্রায়েলীয়রা উওর দেয়; (যিরমিয় ৪৪:১৬-১৯ CL)।
এই “বাংলা” বাইবেল অনুবাদে “স্বর্গের রাণী” কথা উল্লেখ রয়েছে তাই ইংরেজি অনুবাদের বাক্য তুলে ধরা হল না। ইস্রায়েল অষ্টারোৎ দেবীকে ঈশ্বরের সঙ্গে তুলনা করতেন বলতেন অষ্টারোৎ ঈশ্বরের স্ত্রী ছিল। অষ্টারোৎ দেবীকে যৌনতা ও উর্বরতার প্রতীক বলা হতো তাই ইস্রায়েল লোকেরা নিজের মন্দিরে ওই দেবীর নাম অনুসারে শরীর ব্যবসা ও করত। এমনিতে ওই দেবী যৌনতার প্রতীক ছিল স্বাভাবিক ভাবেই ওই অষ্টারোৎ দেবীকে পূজা/ আরাধনার করার লোকদের মন ও যৌনতার মধ্যে ডুবে থাকতো। যিরমিয় ভাববাদী দিনের পর দিন ইস্রায়েলীয়দের সতর্ক করে দেওয়ার পরও ইস্রায়েলীয়রা মন ফেরাইনি, যার ফলে ঈশ্বর তাদেরকে দণ্ড দিয়ে ছিলেন। এক কোথায় বাইবেল হিসেবে “স্বর্গের রাণী” কেউ নেই আর নাই বা কখনও ছিল। এটি অন্য ধর্মের বিশ্বাসাবলম্বীদের কাল্পনিক দেবী আষ্টরোৎ উপাধি ছিল।
তবে হাঁ স্বর্গের একজন রাজা আছেন। প্রকৃত বিশ্বাসীরা তাকে পিতা ঈশ্বর, পুএ ঈশ্বর ও পবিত্র আত্মা ঈশ্বর নাম জানে। এক ঈশ্বরের মধ্যে তিন ব্যক্তি রয়েছে। তিনি একাই স্বর্গে শাসন করেন। তিনি কারও সাথে তাঁর শাসন, তাঁর সিংহাসন বা তাঁর কর্তৃত্ব ভাগ করে না। যীশুর মা মরিয়ম “স্বর্গে রাণী” বলা এটি ভুল। বাইবেল “স্বর্গে রাণী” মরিয়ম এটার কোন প্রমাণ বা ভিত্তি নেই। সত্যি কথা এটাই যে, মরিয়মকে “স্বর্গের রানী” বলা এই প্রচলন রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলীর পোপ ও পাদ্রিরাই চালু করেছেন।
তারা তাদের প্রচারের “স্বর্গের রানী” শব্দটি প্রয়োগ করতে থাকে, যার ফলে রোমান ক্যাথলিক চার্চে মরিয়ম “স্বর্গের রানী” বলে প্রচলিত হয়ে যায়। মরিয়ম কোন ভাবেই “স্বর্গের রানী” নয়। হাঁ মরিয়ম একজন ঈশ্বরের মনোনীত যুবতী ধার্মিক স্ত্রী ছিলেন, যে ঈশ্বরকে ভয় করতেন। ঈশ্বর মরিয়মকে এই জগতের উদ্ধারকর্তাকে বহন করার জন্য মনোনীত করে ছিলেন। এবং তিনি ঈশ্বর মাধ্যমে অনেক আশীর্বাদ ও পেয়ে ছিলেন। মরিয়ম কোন ভাবেই ঈশ্বরীয় ছিলেন না। মরিয়ম একজন সাধারণ মানুষ ই ছিলেন। কোন মানুষকে পূজা করা, আরাধনা করা, উপাসনা করা ও প্রার্থনা করা বাইবেল হিসেবে পাপ। জীবিত ঈশ্বর ও প্রভু যীশুর যতজন অনুসারী ছিলেন তারা কখন ও নিজেকে উপাসনা ও আরাধনা করত না। যেমন একদিন পিতর যখন কর্ণীলিয় এর বাড়ি গেছিলেন তখন কর্ণীলিয় পিতরে পায়ে পড়ে প্রনাম করত চাইলেন তখন পিতর কর্ণীলিয়কে কি বলেছিল? এই বাক্যে দেখুন; (প্রেরিত ১০:২৬)।
এখানে পিতর কর্ণীলিয় বোঝাচ্ছিল, আমি আর আপনি দুই জন মানুষ, মানুষ হয়ে মানুষের আরাধনা (প্রনাম) করা উচিত নয়। সেই রকম একদিন যখন সাধূপৌল লুস্ত্রায় প্রচার করতে গেছিলেন। সেখানে একজন খঞ্জ ব্যক্তি ছিল যে, জন্ম থেকে খঞ্জ সে সাধূ পৌলের সুসমার শুনছিল তো পরে সাধূ পৌল তাকে সুস্থ করল। সুস্থ করার পর কি হল! সেখানে থাকা লোকেরা তারা দেবতা মনে করে বারনাবাসের নাম দিল জিউস ও পৌলের নাম দিল হার্মেস দেবতা। দেবতা মনে করে সেই লোকেরা পৌল ও বারনাবাসের নামে বলিদান করতে চাইল। তখন সাধূ পৌল ও বারনাবাস কি বলে ছিল? তা জানতে এই বাক্যে দেখুন; (প্রেরিত ১৪:১৫)।
এখানেও সাধূ পৌল ও বার্ণবাস তাদের বোঝাছে, আমরাও তো তোমাদের মতো মানুষ। আমাদের কখনও উপাসনা/আরাধনা করবেন না। যদি করতে হয়, স্বর্গের পৃথিবীর ও সমুদ্রের যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সেই ঈশ্বরই আরাধনা/ উপাসনা কর। ঠিক তদ্রূপ যখন একদিন স্বর্গদূত প্রকাশিত বাক্যেয় যোহনকে মেষশাবকের বিবাহ বিষয়ে ভাবি দৃশ্য দেখালেন। তখন যোহন সেই স্বর্গদূতের পায়ের পড়ে প্রণাম/ উপাসনা করতে লাগলেন। তখন স্বর্গদূত যোহনকে কি বলল? বাক্যে দেখুন; (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১০)। মরিয়ম পাপী মানুষ ছিলেন। তাঁর ও উদ্ধারকর্তা প্রয়োজন ছিল। মরিয়ম যখন ঈশ্বরের দূত গাব্রিয়েল দ্বারা এই মঙ্গলবাদ শুনলেন যে, এই জগতের উদ্ধারকর্তা তাঁর গর্ভে ধারণ করবেন, মঙ্গলবাদ শুনে তখন মরিয়ম কি বললেন! এই বাক্যে দেখুন; (লূক ১:৪৬-৪৮)।
এখান দেখবেন মরিয়ম ত্রাণকর্ত্তা জন্ম নিচ্ছেন বলে খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছেন। মরিয়ম জানতেন আদমের পাপের বশত তিনি পাপী ছিলেন। তারও পাপের ক্ষমা প্রয়োজন ছিল। মরিয়মকে কখনও মানুষের উপরে জায়গা দেওয়া উচিত নয়। মরিয়মকে ঈশ্বরীয় ভেবে আরাধনা করা উচিত নয় এমনকি প্রার্থনা করা উচিত নয়। ঈশ্বরকে ছেড়ে কোন মানুষকে আরাধনা করা উচিত নয়। বাইবেল হিসাবে এটি জঘণ্য পাপ। কারণ এটি ঈশ্বরের গৌরবকে ছিনিয়ে নেওয়া বোঝায়। একদিন ভিড়ের মধ্যে যখন যীশুর মাকে মহিমান্বিত করছিল, তখন যীশু জবাবে কি বলছিলেন! এই বাক্যে দেখুন; (লূক ১১:২৮)।
প্রভু যীশু এটা বলছেন না যে, হাঁ সত্যিই মরিয়ম “স্বর্গের রাণী” ধন্য তা কিন্তু বলেননি। প্রভু যীশু এখানে এটাই বোঝাতে চাইছেন, হাঁ মরিয়মের গর্ভে আমায় ধারন করেছেন কিন্তু ধন্য তারাই যারা ঈশ্বরের বাক্য শুনে আর পালন করে। নাকি তারা যারা বর্তমান দিনে মরিয়মের কাছে ফুট ফুট করে কেঁদে প্রার্থনা করে।
0 মন্তব্যসমূহ
আপনাদের কিছু প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই
আমাদের জানান।
ধন্যবাদ ।