হাল্লিলূয়া শব্দের/ কথার অর্থ কি?
লেখকঃ- এসো বাইবেল শিখি/ শিখুন।
বর্তমান দিনে “হাল্লিলূয়া” শব্দ যেন চলতি ভাষায় পরিনত হয়ে গেছে। বড়ো বড়ো প্রচারকরা যারা সমৃদ্ধশালী প্রচার করে থাকেন অর্থাৎ লোকদের ভাবনাকে উক্তেজীত করা প্রচারক মানে স্বপ্নকে উস্কে দেওয়ার প্রচারক, দেখবেন ঘনঘন হাল্লিলূয়া, হাল্লিলূয়া, হাল্লিলূয়া, করেই থাকেন। এমনকি বর্তমান দিনে সোশ্যাল মিডিয়াতে ও দেখতে পাবেন “হাল্লিলূয়ার” ঝড় ও তুলে ধরা হচ্ছে। কিছু লোক আছে আমেন ও হাল্লিলূয়া লিখেই যাচ্ছেন, লিখেই যাচ্ছেন। আমেন ও হাল্লিলূয়া লিখে ভর্তি করে দেবে। যদি সোশ্যাল মিডিয় কেউ পোস্ট করে বলেছেন ভাইরা ও বোনেরা আপনারা আমার জন্য প্রার্থনা করুন। বা আমার বাবা/ মা খুব অসুস্থ, অমুক প্রার্থনা অনুরোধ দেখবেন তখন ও হাল্লিলূয়া, হাল্লিলূয়া, হাল্লিলূয়া।
Image by Freepik |
যদি কেউ হাসপাতালে মৃত্যু সঙ্গে লড়াই করছেন বাঁচার জন্য ছটপট করছেন, আর যদি কেউ ছবি পোস্ট করেছেন দেখবেন তখন ও অনেক লোক আছেন হাল্লিলূয়া, হাল্লিলূয়া, হাল্লিলূয়া করে বেড়াবে। আপনি যদি দেখেন যে কেউ মারা গেছে এবং সেই ব্যক্তির ছবি পোস্ট করা হয়েছে তাহলে তখনও অনেকেই হাল্লিলূয়া বলছে।
বাংলা ভাষায় “হাল্লেলুইয়া” এর অর্থ কি? (What does the meaning of hallelujah in bengali language)
হাল্লিলূয়া কথার অর্থ হল সদাপ্রভুর (ঈশ্বরের) প্রশংসা কর বা সদাপ্রভুর (ঈশ্বরের) প্রশংসা হোক বা সদাপ্রভুর (ঈশ্বরের) গৌরব হোক বোঝায় যেমন; (গীতসংহিতা ১৪৬:১)। এটি ইংরেজীতে বলা হয় Praise the Lord! |
বাইবেলে “হাল্লেলূইয়া” কতবার এসছে? (How many times is Hallelujah in the Bible)
হাল্লিলূয়া শব্দ পুরাতন নিয়ম মুলত গীতসংহিতা পুস্তকে প্রায় ২৪ বার মতো উল্লেখ পাওয়া যায়। তাছাড়া, গীতসংহিতা পুস্তকের দশটি গীতকে হালেলুইয়া গীত ও বলা হয়; (গীতঃ ১০৬, ১১১-১১৩, ১৩৫, ১৪৬-১৫০)। এবং নূতন নিয়মে এই “হাল্লিলূয়া” শব্দ ৪ বার উল্লেখ করা হয়েছে যেমনটি বাক্যে বলে যথা; (প্রকাশিত বাক্য ১৯:১, প্রকাশিত বাক্য ১৯:৩, প্রকাশিত বাক্য ১৯:৪, প্রকাশিত বাক্য ১৯:৬)।
বাইবেলে “হাল্লেলূইয়া” প্রথম উল্লেখ কোথায়? (Where is the first mention of “Hallelujah” in the Bible?)
হালেলুইয়া শব্দটি পুরাতন নিয়ম গীতসংহিতা পুস্তকে উদয় দেখতে পাওয়া যায়। যা মুলত হিব্রু একটি যৌগিক শব্দ যা “הָלַל-Halal” ও “יָהּ-Yah” এই দুটি শব্দ থেকে এসেছে। הָלַל-Halal কথার অর্থ হল প্রশংসা করাকে বোঝায়। কোন ব্যক্তির বা বস্তুর গুণাবলীকে প্রশংসা করাকে ব্যবহৃত হয়। বাইবেল প্রথমবার הָלַל-হাল্লাল শব্দ এসছিল আদিপুস্তকে যেমন বাক্য বলে যথা; (আদিপুস্তক ১২:১৫)।
বাইবেলে এই “הָלַל-হাল্লাল” শব্দ একাধিকবার ব্যবহৃত হয়েছে যেমন; আদিঃ ১২:১৫, বিচারঃ ১৬:২৪, ১ শমূয়েল ২১:১৩, ২ শমূয়েল ১৪:২৫, ২২:৪, ১ রাজাবলি ২০:১১, ১ বংশাবলি ১৬:৪, ১০, ২৫, ৩৬, ২৩:৫, ৩০, ২৫:৩, ২৯:১৩, ২ বংশাবলি ৫:১৩, ৭:৬, ৮:১৪, ২০:১৯, ২১, ২৩:১২, ২৯:৩০, ৩০:২১, ৩১:২, ইষ্রা ৩:১০, নহিমিয় ৫:১৩, ১২:২৪, ইয়োব ১২:১৭, ২৯:৩, ৩১:২৬, ৪১:১৮, গীতসংহিতা ৫:৫, ১০:৩, ১৮:৩, ২২:২২,২৬, ৩৪:২, ৩৫:১৮, ৪৪:৮; ৪৮:১; ৪৯:৬; ৫২:১; ৫৬:৪, ১০, ৬৩:৫, ১১, ৬৪:১০; ৬৯:৩০, ৩৪, ৭৩:৩; ৭৪:২১, ৭৫:৪; ৭৮:৬৩; ৮৪:৪; ৯৬:৪; ৯৭:৭; ১০২:৮, ১৮; উপদেশক ২:২, ৭:৭; পরমগীত ৬:৯; যিশাইয় ১৩:১০; ৩৮:১৮; ৪১:১৬; ৪৪:২৫; ৪৫:২৫; ৬২:৯; ৬৪:১১; যিরমিয় ৪:২, ৯:২৩, ২০:১৩, ২৫:১৬, ৩১:৭, ৪৬:৯, ৪৯:৪, ৫০:৩৮, ৫১:৭, যিহিস্কেল ২৬:১৭, যোয়েল ২:২৬, নহূম ২:৪ ইত্যাদি ইত্যাদি।
আর Yah/ Jah(יָהּ) শব্দের অর্থ হল ইস্রায়েলের ঈশ্বর “YHVH” সংক্ষিপ্ত বিবরণ Yah/Jah(יָהּ) এই নাম ইস্রায়েলীয়দের সাথে চুক্তির সম্পর্ক যুক্ত। যা প্রমাণ করে ইস্রায়েলের ঈশ্বর যিনি স্বয়ং থেকে বিদ্যমান ঈশ্বর। ঈশ্বর যখন আপন পবিত্র প্রজা ইস্রায়েলদের মিসর দেশ থেকে বের করে আনার জন্য মোশিকে মনোনীত করে ছিলেন তখন ঈশ্বর স্বয়ং এর পরিচয় কি দিয়ে ছিলেন! এই বাক্যে দেখুন; (যাত্রাপুস্তক ৩:১৪)। ইস্রায়েলীয়রা যেন জীবন ঈশ্বর নাম অনথা না নেয় তার জন্য ব্যবস্থা ও দেওয়া হয়েছিল যেমন বাক্য বলে; (যাত্রাপুস্তক ২০:৭)।
ইস্রায়েলীয়দের (যিহূদী) কাছে ঈশ্বরের নাম অতি পবিত্র নাম। যা তারা উচ্চারণ করতে ও ভয় পেত তাই ইস্রায়েলীয়রা (אֲדונָי – Adonai) শব্দ উচ্চারণ করত যার অর্থ হল প্রভু/ ঈশ্বর। ইংরেজি অনুবাদের সর্বদা বড়ো হাতের LORD শব্দ ব্যবহৃত। এই Yah/Jah( יָהּ ) শব্দ বাইবেলে একাধিক বার ব্যবহৃত যেমন; (যাত্রাঃ ১৫:২, ১১৭:১৬, গীতঃ ৬৮:৪,১৮, ৭৭:১১, ৮৯'৮, ৯৪:৭,১২, ১০৮:১৮, ১০৪:৩৫, ১০৫,৪৫, ১০৬:১,৪৮, ১১১:১, ১১২:১, ১১৩:১,৯, ১১৫:১৭, ১১৬:১৯, ১১৭:২, ১১৮:৫,১৪,১৭, ১২২:৪, ১৩০:৩, ১৩৫,১,৩,২১, ১৪৬:১,১০, ১৪৭'১,২০, ১৪৮:১,১৪, ১৪৯:১,৯, ১৫০:১,৬, যিশাঃ ১২:২, ২৬:৪, ৩৮:১১ ইত্যাদি ইত্যাদি)
(হাল্লিলূয়া- Ἁλληλούϊα) Hallelujah ঈশ্বরের প্রশংসা করা। অর্থাৎ (হাল্লিলূ/ হালেলু-הַ֥לְלוּ (hal-lū)=প্রশংসা করা। আর য়া/ ইয়া-יָהּ (Yah/Jah) = יְהוָֹה -“YHVH”/ Yahweh ইস্রায়েলের ঈশ্বরের নাম। অর্থাৎ যার অর্থ ঈশ্বরের (সদাপ্রভুর) প্রশংসা হোক। বাইবেলে “הִלֵּל-Hillel” শব্দ ও প্রয়োগ করা যার অর্থ একই অর্থাৎ “প্রশংসা” করাকে বোঝায়। הִלֵּל-হিল্লেল শব্দ הָלַל-হাল্লাল শব্দ থেকে আগত। বাইবেল হিল্লেল শব্দ অব্দোন এর পিতার নাম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাইবেলে এই শব্দ দুই বার উল্লেখ করা হয়েছে তাও আবার একই পুস্তক ও একই অধ্যায়ে যথা; (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১২:১৩, ১২:১৫)।
আমরা সুস্পষ্ট হয়েছি হাল্লিলূয়ার শব্দের অর্থ হল; সদাপ্রভুর প্রশংসা বা গৌরব হোক। এখন অনেক মণ্ডলীতে আমরা দেখতে পাই ঈশ্বরের দাস যখন বাক্য উওলোন করেন আর যখন বড়রা ঘুমিয়ে পড়ে যায় তো পালক মহাশয় সদস্যবিন্দের জাগিয়ে তুলার জন্য মাঝে মাঝে হাল্লিলূয়া শব্দ ও প্রয়োগ করে থাকেন। এই শব্দ প্রয়োগ করা কতটা ঠিক হবে আপনার বিবেচনা করবেন। কিন্তু আমি মনে করি এই শব্দ প্রয়োগ না করাই ভালো হবে, কারণ ঘুম তাড়ানোর জন্য হাল্লিলূয়া শব্দ ব্যবহার করা ন্যায্য হবে না। আমরা পূর্বেই জেনেছি যে এই শব্দের বিশেষ একটি অর্থ ও রয়েছে। ঘুম তো সকলেরই আসে তা বড় হোক আর ছোট হোক। আপনাদের মনে পড়ে ঈশ্বর যিনি নিজেকে পুএ যীশুর মাধ্যমে এই জগতে প্রকাশ করেছিলেন আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে।ক্রুশে মৃত্যু বরণ করার পূর্বে তিনি যখন অত্যান্ত বেদনা দায়ক ভাবে গেৎশিমানী বাগানে তাঁর পিতার কাছে প্রার্থনা কর ছিলেন। তখন তিনি তাঁর সঙ্গে বিশেষ কয়েজন শিষ্যদের নিয়ে গেছিলেন। যীশু যখন এসে দেখেন, তাঁর শিষ্যরা ঘুমিয়ে ছিল।
প্রভু যীশু এসে তাদেরকে হাল্লিলূয়া শব্দ বলে ঘুম থেকে জাগানিয়া। বরং তাদেরকে এসে বিস্তারিত ভাবে বোঝান। শিষ্যদের কত সৌভাগ্য ছিল যে, তারা স্বয়ং প্রভু যীশুকে সশরীরে দেখে ছিলেন। শিষ্যরা প্রভু যীশু সশরীরে থাকার সত্যেও ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু এখন ঈশ্বর যিনি নিজেকে পুএ যীশুর মাধ্যমে প্রকাশ করে ছিলেন তিনি এখন সশরীরে নেই। আমরা প্রভু যীশুকে দেখিনি কিন্তু হাঁ তিনি পবিএ আত্মার দ্বারাই আমাদের অন্তরে সর্বদা বিরাজমান। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ মাএ আমরা খুবই দুর্বল ঘুম আসবেই। হাল্লিলূয়া কথার অর্থ হল ঈশ্বরের প্রশংসা হোক, গৌরব হোক, ধন্যবাদ দেওয়াকে ও বোঝায়। অনেক লোককে দেখবেন যদি কেউ মারা গেছে আর সেই ব্যক্তির ছবি পোস্ট করা হয়েছে দেখবেন তখন ও অনেকে হাল্লিলূয়া করেই যাচ্ছে। এখানে হাল্লিলূয়া বলা অযোগ্য বোঝায় কারণ ওই পাপী ব্যক্তি মারা গেলে তখন কি ঈশ্বরের খুশি হয়? মটেও খুশি হন না যেমন বাক্য বলে; (যিহিস্কেল ১৮:২৩, যিহিষ্কেল ১৮:৩২)। তদ্রূপ স্বয়ং ঈশ্বর অর্থাৎ পুএ যীশু একই কথা বলে ছিলেন; (মথি ১৮:১৪)।
পাপীরা যখন মারা যায় তখন ঈশ্বর মটেই খুশি হন না। বরং ঈশ্বর চায় সকলে মন পরিবর্তন করে জীবন্ত ঈশ্বরকে জানুক আর ঈশ্বরের দেখান পথ হিসাবে চলে। বিধির বিধান কে মেনে আর যদি সেই ব্যক্তি জীবিত থাকে সেই ব্যক্তির সাহায্যে অন্যেরা ঈশ্বরকে জানুক ও বুঝুক তখনই ঈশ্বরের প্রশংসা হয়। সেই প্রশংসা শুধু ঈশ্বরকে দেওয়া উচিত। আপনাদের হাল্লিলূয়া সেই সকল ছবিতে ঈশ্বরের প্রশংসা হয় না বরং বিদ্রুপ করাকে বোঝায়।
ঈশ্বর সকলকে বোঝার মত জ্ঞান প্রদান করুন।
0 মন্তব্যসমূহ
আপনাদের কিছু প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই
আমাদের জানান।
ধন্যবাদ ।