খ্রিস্টানদের কি রাখীবন্ধন উৎসব পালন করা উচিত?
লেখকঃ-এসো বাইবেল শিখি/ শিখুন ।
আমরা দেখছি এই রাখি বন্ধন বিষয়কে নিয়ে খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের মধ্যে ও বিভ্রান্তি তৈরী হয়ে থাকে। কিছু পক্ষ বলেন পালন করা উচিৎ। যারা বলে পালন করা উচিত, তাঁহাদের দাবি এটা থড়ি না বাইবেলে লেখা রয়েছে। যখন বাইবেলে লেখা নেই তাহলে বেশক পালন করা যায়। এটা আমাদের সাংস্কৃতিক উৎসব। তো আবার কিছু পক্ষ বলেন নানা পালন করা উচিৎ নয়, কারণএটি অন্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসব। খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের পালন করা উচিত কিনা বলে! এই বিষয় নিয়ে বোঝানোর পূর্বে সংক্ষেপে আপনাদের ধারণা দিতে চাই এই উৎসব সম্পর্কে তবে আপনাদের বিষয়কে বুঝতে সহজ হয়ে দাঁড়াবে।
রাখীবন্ধন কি?
রাখীবন্ধন হলো; একটি হিন্দু এবং জৈন উত্সব যা শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার দিন প্রতি বছর পালিত হয়। এটি শ্রাবণী (সাওয়ানি) বা সালুনো নামেও পরিচিত, এটি শ্রাবণ (সাওয়ান) এ উদযাপিত হয়। রাখী বন্ধনে রক্ষা সুত্রের সর্বাধিক গুরুত্ব রয়েছে। রাখি সাধারনত; কাঁচা সুতার মতো সস্তা আইটেম থেকে শুরু করে রঙিন আর্টস, সিল্ক সুতা এবং সোনার বা রূপার মতো দামি আইটেম হতে পারে। রাখী বন্ধন ভাই ও বোন সম্পর্কের বিখ্যাত উত্সব, রাখি বন্ধনকে রক্ষা বন্ধন বলা হয়ে থাকে। রক্ষা মানে সুরক্ষা এবং বন্ধন মানে আবদ্ধ। রাখি বন্ধনের দিন, বোনেরা দেবতাদের কাছে তাদের ভাইয়ের অগ্রগতির জন্য প্রার্থনা করে। রাখি সাধারণত বোনেরা ভাইদেরকে বেঁধে থাকে তবে ভাই, আত্মীয়স্বজন (যেমন বাবা থেকে মেয়ের) পরিবারেও ব্রাহ্মণ, গুরু এবং ছোট মেয়েদের দ্বারা বাঁধা হয়। কখনও কখনও জননেতা বা জনগণের বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে রাখিও বাঁধা হয়। রাখী বন্ধনের দিন বাজারে প্রচুর উপহার বিক্রি হয়। উপহার ও নতুন পোশাক কিনতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লোকজন ভিড় করে থাকে। রাখি বন্ধনের দিন ভাইরা রাখির বিনিময়ে তাদের বোনকে কিছু উপহার দিয়ে থাকে। রাখী বন্ধন এমন একটি উৎসব যা ভাই ও বোনদের ভালবাসাকে আরও সু-দৃঢ় করে তোলে।
এই দিনটিতে সমস্ত পরিবার এক্যবদ্ধ হয়। এবং একের অপরের ভালবাসা ভাগ করে নেয়। সকালে স্নান করার পর মহিলারা/মেয়েরা একটি থালায় পূজা করার জন্য থালাটি সাজায়। থালিতে থাকে সিন্দুর, চাল, বাতি, মিষ্টি। পুরুষ/ ছেলেরা প্রস্তুত হয়ে পূজাতে বা কোনও উপযুক্ত জায়গায় টিকা দেওয়ার জন্য বসে থাকে। প্রথমে অভিযুক্ত দেবদেবীর পূজা করা হয়। এর পরে, মাথায় টিকা দেওয়া হয় তার পর চাল টিকাতে লাগানো হয় বা মাথায় ছিটিয়ে দেওয়া হয়। তারপর আরতি দেওয়া হয়। এরপর ডান হাতে রাখি বেঁধে দেওয়া হয়। শেষে ছেলে বা পুরুষ বোনকে কিছু উপহার দেয় মানে উপহার মাধ্যমে বোঝাতে চায় যে, বোন আমি শপথ করছি নিয়ত তোমায় রক্ষা প্রদান করব। এই ভাবে রাখি বন্ধন অনুষ্ঠান শেষ করেই খাবার খাওয়া হয়। এক দিক দিয়ে দেখলে যেন ভাই ও বোনের সম্পর্কে অপরিহার্য বলা যায়। মানে সম্পর্ক খুব সুন্দর দেখায়। রাখী বন্ধন যে শুধুমাত্র ভাই ও বোনের সম্পর্কে বোঝায় তা কিন্তু নয়। এর মূল শাখাও রয়েছে রাখী বন্ধন এই জন্যই শুরু হয়েছিল যে এর পিছনে হিন্দু দেব-দেবতাদের কিছু পৌরাণিক কাহিনি আছে।
কৃষ্ণ ও দ্রৌপদী
মহাভারতে আছে, একটি যুদ্ধের কৃষ্ণের কবজিতে আঘাত লেগে রক্তপাত শুরু হলে পাণ্ডবদের স্ত্রী দ্রৌপদী তাঁর শাড়ির আঁচল খানিকটা ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দেন। এতে কৃষ্ণ অভিভূত হয়ে যান। দ্রৌপদী তাঁর অনাত্মীয়া হলেও, তিনি দ্রৌপদীকে নিজের বোন বলে ঘোষণা করেন এবং দ্রৌপদীকে এর প্রতিদান দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। বহু বছর পরে, পাশাখেলায় কৌরবরা। মহারাজ সংবরণ ও সূর্যকন্যা তপতীর পুত্র ছিলেন কুরু । রাজা কুরুর বংশধরদের কৌরব বলা হয় । সেই কৌরবদের মধ্য একজন যার নাম দুঃশাসন দ্রৌপদীকে অপমান করে তাঁর বস্ত্রহরণ করতে গেলে কৃষ্ণ দ্রৌপদীর সম্মান রক্ষা করে সেই প্রতিদান দেন। এইভাবেই রাখীবন্ধনের প্রচলন হয়। বলিরাজা ও লক্ষ্মী
বলা হয় দৈত্যরাজা বলি বিষ্ণুর পরমভক্ত ছিল। তো একদিন ভগবান বিষ্ণু বৈকুণ্ঠ ত্যাগ করে বালির রাজ্য রক্ষা করতে আসেন। তখন, ভগবান বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষ্মী নিজের স্বামীকে পাওয়ার জন্য ছদ্মবেশভুষা ধারণা করেন। পরে লক্ষ্মী, বলিরাজার কাছে সাধারণ মেয়ের ছদ্মবেশে আসেন। লক্ষ্মী বলিকে বলেন, তাঁর স্বামী নিরুদ্দেশ। যতদিন না স্বামী ফিরে আসেন, ততদিন যেন বলি তাঁকে আশ্রয় দেন। বলিরাজা ছদ্মবেশী লক্ষ্মীকে আশ্রয় দিতে রাজি হন। শ্রাবণ পূর্ণিমা উৎসবে লক্ষ্মী বলিরাজার হাতে একটি রাখী বেঁধে দেন। বলিরাজা এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে লক্ষ্মী আত্মপরিচয় দিয়ে সব কথা খুলে বলেন। এতে বলিরাজা মুগ্ধ হয়ে বিষ্ণুকে বৈকুণ্ঠে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। বলিরাজা বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেন। সেই থেকে শ্রাবণ পূর্ণিমা তিথিটি বোনেরা রাখীবন্ধন হিসেবে পালন করে। সন্তোষী মা
একদিন গণেশের বোন গণেশের হাতে একটি রাখী বেঁধে দেন। এতে গণেশের দুই ছেলে শুভ ও লাভের হিংসে হয়। তাদের কোনো বোন ছিল না। তারা বাবার কাছে একটা বোনের বায়না ধরে। গণেশ তখন তাঁর দুই ছেলের সন্তোষ বিধানের জন্য দিব্য আগুন থেকে একটি কন্যার জন্ম দেন। এই দেবী হলেন গণেশের মেয়ে সন্তোষী মা। সন্তোষী মা শুভ ও লাভের হাতে রাখী বেঁধে দেন। এই ভাবেও প্রচলিত হয়। আমরা দেখলাম এই উৎসব হিন্দুদের (অবিশ্বাসী) পরম্পরা কি ভাবে জুড়ি রয়েছে, তা অবিশ্বাস করা যায় না। এখন এই অবিশ্বাসীদের উৎসব পালন করা যায় কি না বাইবেল কি বলে! তা আমরা বাইবেল ভিত্তিক জানার চেষ্টা করবো। বাইবেল দৃঢ়ভাবে নিষিদ্ধ করে অবিশ্বাসী উৎস পালন করতে যেমন এই সব বাক্য বলে যথা; (ইফিষীয় ৪:১৭, ৫:৮)। বাইবেল বলে যখন আমরা অবিশ্বাসী ছিলাম। তখন আমরা অবিশ্বাসীর ন্যায় চলতাম। কিন্তু এখন, আমরা যখন প্রভুতে এসছি। এবং বিশ্বাস সহকারে ঈশ্বরকে গ্ৰহণ করেছি। এখন পূর্বের মতো কোন পরম্পরা সংস্কৃত পালন করতে পারিনা। কারণ এখন আমরা নতূন সৃষ্টি হয়েছি। এখানে বিশ্বাসীদের কথা বলা হচ্ছে। যারা বিশ্বাস করে ঈশ্বরকে গ্ৰহণ করেছেন। আমরা ঈশ্বরকে পরিধান করেছি পুরাতন বিষয়কে ত্যাগ করেছি নূতন ভাবে সৃষ্টী হলাম। সেই অর্থে অন্য জাতিদের মতো কোনো কিছু করতে পারিনা। অনেকে বলে আমি কোন রীতি রিওয়াজ করি না। আমার বোন ও ভাই সে অবিশ্বাসী। তার প্রেম ও ভালোবাসার জন্যই আমি বোন বা ভাইকে রাখি বাঁধি বা পরি। এখানে ওই তথাকথিত খ্রিস্টান কাছে প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায়, ঠিক আছে আপনি যখন প্রেম বা ভালোবাসার জন্য আপনি আপনার বোন বা ভাইকে রাখি পরিয়ে দিচ্ছেন পরেছেন। তাহলে আপনাকে একটি কথা জিজ্ঞাসা করতে চাই। আপনি যখন এতোই আপনার বোন ও ভাইকে ভালোবাসেন। তাহলে কেন আপনি আপনার বোন ও ভাইকে ঈশ্বরের কথা বলছেন না? মানে কেন সু-সমাচার শুনাছেন না? আপনার বোন ও ভাই সেই নরকের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে অনন্তঃ জীবন পায় বলে! সেই জলন্ত অগ্নি থেকে রক্ষা পায় যা অবিশ্বাসীদের জন্য ঈশ্বর নিয়োগ করে রেখেছেন যেমন এই সকল বাক্য বলে থাকে; (প্রকাশিত বাক্য ২১:৮, ২০:১৪, ২২:১৫, রোমীয় ১:২৮-৩২, ১ করিন্থীয় ৬:৯-১০, ১৫:৫০)। এখানে প্রশ্ন দাঁড়ায় যদি আপনি আপনার পরিবারকে এতোই ভালোবাসেন, ভালোবাসার জন্য করেন তাহলে এই দিনই কেন? বছরে আরো অনেক মাস-দিন, আছে সেই দিন করেন না কেন? নাকি এখনো আপনি প্রভুতে এসে অন্য কোন ধর্মের রীতি রিওয়াজ বিশ্বাস করেন? নাকি আপনার সম্পর্ক চিরতরে বিছিন্ন হয়ে যাওয়ার ভয়ে এই সব করছেন? যদি তাই হয়়ে থাকে তাহলে বাইবেল কি বলে তা এই বাক্যে দেখুন; (মথি ১০:৩৭, লূক ১৪:২৬)। প্রভু যীশু স্পষ্ট রূপেই বলছেন, যদি আপনি প্রভু যীশু থেকে অধিক নিজের পরিজনগণকে অধিক জায়গা দিয়েছেন তাহলে আপনি প্রভু যীশুর শিষ্য হতে পারেন না। কোথায় বলতে গেলে নাম মাএই আপনি বিশ্বাসী হয়েছেন। যদি না আপনি ঈশ্বরের জন্য দাঁড়াতে না পারেন। এই বিষয় নিয়ে ঈশ্বর/ প্রভু যীশু কি বলেছিলেন তা এই বাক্যে দেখুন; (মথি ২২:৩৭-৩৮)। এই কথা পুরাতন নিয়মে ইস্রায়েলদেরকে ও বলা হয়েছিল যথা; (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৫)। বাইবেল সর্বদা নিজের আপজন থেকে অধিক ঈশ্বরকে জায়গা দিতে বলেছে। তা বলে বাইবেল এটা বলছে না যে, আপনি আপনার পরিবারের লোকদের জন্য কোন চিন্তা বা তাদের ভালো, মন্দ বুঝতে হবে না বলে! এবং তাদের সাথে সম্পর্ক ভেঙে দিন বলে! তা কিন্তু নয় যেমন সুস্পষ্ট ভাবে বাক্য বলে যথা; (১ তীমথিয় ৫:৮)। আপনার পরিবারের জন্য নিয়ত চিন্তা করতে হবে। তাদের সব কিছু দায়িত্ব আপনার উপরে। আপনি আপনার পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারেন, তার জন্যই ঈশ্বর আপনাকে পরিবারের দিয়েছেন। শুধুমাত্র বিশ্বাসের সঙ্গে কোন কিছু চুক্তি করা উচিৎ নয় যেটা বাইবেল বারন করেন। যদি আপনার বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বাড়ির আপন জন তাড়িয়ে দেয়। তাহলে তখন সেই ভাই ও বোন কোন এক বিশ্বাসীর বাড়িতে আশ্রয় নিতে পারেন। তা বলে নিজ পরিবারের প্রতি কোন মন্দ ভাবটা যেন না থাকে। বরং নিয়তো আপনি আপনার পরিবারের জন্য প্রার্থনা করতে পারেন তাঁরা যেন ঈশ্বরকে জানুক।
উপসংহার
বিশ্বাসীদের জানা প্রয়োজন যখন কোন উৎসবকে পালন করার মানে হচ্ছে যে, ওই উৎসবে জুড়ে থাকা পরম্পরা সংস্কৃত রিতী রিওয়াজকে পালন করে ওই উৎসবকে স্বীকৃতি দেওয়া আর একই সঙ্গে অন্যের সাথে উৎসবে আনন্দ করাকে বোঝায়। হতে পারে আপনি রিতীরিবাজ করেন না। কিন্তু আপনি সেই পরম্পরা সংস্কৃতকে স্বীকৃতি দেচ্ছেন। যখন কোন পরম্পরা সংস্কৃত উৎসব আসে তখন প্রত্যেক বিশ্বাসীর জান প্রয়োজন। ওই পরম্পরা সংস্কৃত মূল উৎস কোথায় থেকে এসেছে? কি ভাবে এসছে? উৎসব এর প্রতীক কি? আরও ভিন্ন ভিন্ন বিষয় জানতে হবে বাইবেলে ভিত্তিক। আমরা বাইবেলের নানা বাক্যের সঙ্গে দেখলাম বা জানলাম খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা অনুচিত।
ঈশ্বর সকলকে আশীর্বাদ করুন।
তথ্যসূত্রঃ
0 মন্তব্যসমূহ
আপনাদের কিছু প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই
আমাদের জানান।
ধন্যবাদ ।