Header Ads Widget

Responsive Advertisement

মরিয়ম বাইবেলের চিরস্থায়ী কুমারীত্ব কি?// Is the perpetual virginity of Mary biblical?

মরিয়ম বাইবেলের চিরস্থায়ী কুমারীত্ব কি?

লেখকঃ এসো বাইবেল শিখি/ শিখুন।

মরিয়ম যে চিরস্থায়ী কুমারী ছিলেন সেই ভুল ধারণাটি এখানে ভালোভাবে আলোচনা করা হয়েছে, তাই ধৈর্য ধরে পুরো লেখাটি পড়ুন।

Image by WikiImages from Pixabay

ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে বিরোধের একটি প্রাথমিক বিষয় হল; ধন্য ভার্জিন (কুমারীত্ব) মরিয়ম সম্পর্কিত বিশ্বাস। যীশুর মাকে আরাধনা বা উপসনা করার ক্যাথলিক ঐতিহ্য এবং নিরপেক্ষ ধারণা এবং অনুমানের মতবাদকে প্রায়শই প্রোটেস্ট্যান্টরা চ্যালেঞ্জ করে। এমনকি মরিয়ম চিরস্থায়ী কুমারীত্বকেও আজ বেশিরভাগ প্রোটেস্ট্যান্টরা অস্বীকার করেছে, যদিও বেশিরভাগ প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কারক, আগে সর্বজনীন খ্রিস্টান অর্থাৎ (ক্যাথলিক মন্ডলী) বিশ্বাসের সাথে সঙ্গতি রেখে, এই শিক্ষাকে রক্ষা করেছিলেন।

রোমান ক্যাথলিক দাবি করেন যে, যীশুর মা মেরি সারা জীবন কুমারি ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সব সময়ই কুমারী ছিলেন। রোমান ক্যাথলিক দাবি করেন যে, তাদের সন্তানের জন্মের পর মেরি নিজের স্বামী যোসেফের সাথে কখনও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেননি। মরিয়ম সারাটি জীবন কুমারীত্বই ছিলো অর্থাৎ যীশুর জন্ম হওয়ার পর মরিয়ম কোনো সন্তানকে জন্ম দেয়নি। রোমান ক্যাথলিক মরিয়মকে চিরস্থায়ী কুমারীত্ব ঘোষণা করার জন্য তারা এক পা আগেই চলে গেছে। রোমান ক্যাথলিক তাদের পুস্তকে বলে; খ্রিষ্টের জন্ম 'তার মায়ের কুমারী অখণ্ডতাকে হ্রাস করেনি বরং এটিকে পবিত্র করেছে (CCC 499) এই পুস্তকে তারা মরিয়মকে চিরস্থায়ী কুমারীত্বে ঘোষণা করেই ফেলেছে। এখন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক তবে বাইবেল হিসেবে মরিয়ম কি চিরস্থায়ী কুমারীত্ব ছিলেন? আমরা নির্দিষ্ট বাইবেলের বাক্যে দেখার আগে, রোমান ক্যাথলিক চার্চ কেন মরিয়মের চিরস্থায়ী কুমারী বিশ্বাস করে তা বোঝার চেষ্টা করব বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। রোমান ক্যাথলিক চার্চ মরিয়মকে ঈশ্বরের মাতা এবং স্বর্গের রানী হিসাবে দেখে। রোমান ক্যাথলিকরা বিশ্বাস করেন মরিয়মের স্বর্গে একটি উচ্চ স্থান রয়েছে, যেখানে যীশু এবং ঈশ্বর পিতার নিকটতম স্থানে অধিষ্ঠিত রয়েছে। এটিও একটি বিভ্রান্তিকর ধারণা শাস্ত্রে কোথাও শেখানো হয় না।

রোমান ক্যাথলিকদের মরিয়মকে নিয়ে এটি একটি বিভ্রান্তিকর শিক্ষা। যেই শিক্ষা বাইবেলের সঙ্গে কোনো সঙ্গতিপূর্ণ নেই অর্থাৎ যেই শিক্ষা আকাশ-পাতাল পার্থক্য। রোমান ক্যাথলিকদের হিসেবে এটা মনে হয় যে, বিয়ের পর স্বামী ও স্ত্রী নিজের প্রাপ্য অধিকার নেওয়া অনুচিত, যদি অনুচিত তবে বাক্যে কি বলে একটু দেখে নেওয়া যাক। যেই বাক্যে আমাদের আলোচ্য বিষয় বস্তুর সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে; (১ করিন্থীয় ৭:৩-৪)। এই বাক্যটি বলে যে বিবাহের পর স্বামী তার স্ত্রীকে নিজের অধিকার অর্থাৎ শরীরের অধিকার দেয়, একই ভাবে স্ত্রী যেন নিজের অধিকার স্বামীকে দেয়। এই বাক্যতে আমরা পৌলের মাধ্যমে ঈশ্বরকে দেখতে পাই, বা ঈশ্বর বলছেন যে বিয়ের পর শারীরিক সম্পর্ক করা ঠিক আছে। এটা কোন অপরাধ নয় এই বাক্যেকে আরও সুস্পষ্ট হওয়ার জন্য আর একটি বাক্যে দেখি; (আদিপুস্তক ২:২৭-২৮)।

এখানে বাক্যটিতে মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করুন যে, ঈশ্বর পৃথিবীতে স্বামী ও স্ত্রী প্রথম জুটি আদম, এবং হবাকে, আশীর্বাদ করছেন। এবং এই ভাবে বলছেন; ফলবান হও এবং সংখ্যায় বৃদ্ধি করো পৃথিবীকে পরিপূর্ণ কর এবং বর্শিভূত কর” এই বাক্যে সাধারণ ভাষায় ঈশ্বর আদম ও হবাকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার অনুমতি দিচ্ছেন এবং প্রজনন ক্ষমতা আশির্বাদ করছেন, যা থেকে বোঝা যায় ঈশ্বর বিয়ের মধ্যে যদি স্বামী ও স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্ক লিপ্ত হয় তা ন্যায্য। রোমান ক্যাথলিকদের হিসেবে কথা ধরা হয় তবে এখানে ঈশ্বর কি স্বামী ও স্ত্রীদের পাপ করাচ্ছিলেন? উওর মটেও না বরং বিয়ে পরে স্বামী ও স্ত্রী যৌন ক্রিয়ার লিপ্ত হলে তা আশীর্বাদের করেছেন। সুতরাং এই বাক্যের উপসংহার আসলে এই বাক্যে থেকে প্রমাণিত হয় যে, মরিয়ম তার প্রিয়তম স্বামী যোফেষের সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। বাইবেলে মরিয়ম চিরস্থায়ী কুমারীত্ব বিষয়ে শিক্ষা দেয় না; (মথি ১:২৫)।

এই বাক্যটি বলে যে তিনি তার স্ত্রী অর্থাৎ মরিয়মের কাছে যাননি। যতক্ষণ না মরিয়মের একটি সন্তান হয়েছিল অর্থাৎ তিনি জন্ম দেননি। এখানে যাননি কথার অর্থ হলো; শারীরিক সম্পর্ক করা বোঝায়। যদি এই বাক্যে কেউ আধ্যত্মিক অর্থে প্রার্থনা পূর্বক পড়ে তো বাক্যে কি বলছে তা সবাই বুঝতে পারবে। এই বাক্যে আদৌও কি বলতে চাইছে তাঁর উওর বোঝার জন্য আর একটি বাক্যে রয়েছে যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, মরিয়ম তার স্বামীকে নিজের শরীরের অধিকার দিয়ে ছিলেন অর্থাৎ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন যথা; (মথি ১৩:৫৫-৫৬)।

এই বাক্যেতে হয়েছে যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যখন শিক্ষা দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর শিক্ষা শুনে অনেকেই আশ্চর্য হয়েছিলেন। এবং বলতে শুরু করেছিলেন যে, সেই ছুতার মিস্ত্রী ছেলে অর্থাৎ জোসেফের ছেলে কি নয়! তার মায়ের নাম মরিয়ম কি নয়! ইয়াকুব, ইউসুফ, শিমোন এবং এহুদা ভাই নন? এর বোন কি আমাদের মধ্যে নেই! সেখানে উপস্থিত সবাই যীশুর কথা শুনে অবাক হয়ে গেল। এবং সকলেই যীশুর বাবা-মা এবং ভাই-বোনদের চিনতেন। এই বাক্যের হিসাবে এখানে প্রমাণ হয় যে, মরিয়ম চিরস্থায়ী কুমারীত্ব ছিলেন না। এখানে আবার রোমান ক্যাথলিকদের সমস্যা হয়ে যায় আর দুটি বিভ্রান্তিকর শিক্ষা দেয়। 

প্রথমত, তারা বলে যে এটি যীশুর নিজের ভাইদের কথাই বিবৃতি দেননি। অপেক্ষাকৃত “খুড়তুত ভাইদের কথা বলছে। পাঠকদের পরিষ্কার করে দেওয়া ভালো যে, রোমান ক্যাথলিকদের এই কথা কাল্পনিক কথা। এবং ভ্রান্তি শিক্ষা কারণ এখানে “ভাই” দের জন্য যেই গ্ৰীক শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো (ἀδελφός-adelphos) এর সাধারণ এবং আক্ষরিক অর্থ একটি শারীরিক ভাই। “খুড়তুত ভাই” এর জন্য ভিন্ন একটি গ্রীক শব্দ ছিল, যা এখানে ব্যবহৃত হয়নি। আরও, যদি তারা যীশুর খুড়তুত ভাই হত, তবে কেন তাদেরকে প্রায়শই যীশুর মাতা মরিয়মের সাথে হওয়া হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল? তার মা এবং ভাইদের তার সাথে দেখা করার প্রেক্ষাপটে এমন কিছু নেই যা, থেকে বোঝা যায় যে তারা তার আক্ষরিক, রক্তের সম্পর্কযুক্ত, সত্যিকারের ভাই ছাড়া অন্য কিছু ছিল!

দ্বিতীয়ত, রোমান কাথলিক যুক্তি হ’ল যে যীশুর ভাই এবং বোনেরা এক পূর্ববর্তী বিবাহের থেকে সন্তানরা ছিল। আপনাদের জানাই রোমান ক্যাথলিকদের এটিও একটি বিভ্রান্তিকর শিক্ষা তাদের মন গড়া গল্পের কথা। যোষেফের মরিয়মের চেয়ে বয়স্ক হওয়ার পুরো তত্বটি, এর আগে বিবাহিত হয়েছিল, একাধিক সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল এবং তারপরে মরিয়মের সাথে বিবাহের আগে বিধবা হওয়া বাইবেলের কোনো ভিত্তি ছাড়াই নিজের হিসাবে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সমস্যা হল বাইবেল এমনকি ইঙ্গিত দেয় না যে ইউসুফ মরিয়মের সাথে বিয়ে করার আগে বিবাহিত ছিলেন বা পিতা হয়েছিলেন! মরিয়মকে বিবাহ করা আগে যদি যোষেফের সন্তান ছিলো তবে তাদের যোষেফ এবং মরিয়মের বেৎলেহেম যাত্রার সময়ে কেন উল্লেখ করা হয়নি? যেমন যাএার উদ্দেশ্য কিছু বাক্যে যথা; (মথি ২:১৩-১৫মথি ২:২০-২৩লূক ২:৪-৭)। 

যদি যোষেফ মরিয়মকে বিয়ের আগের সন্তান ছিলো তবে কেন এখানে উল্লেখ করা হয়নি? এই ভাই বোনেরা জোসেফ এবং মেরির প্রকৃত সন্তান ছাড়া অন্য কিছু ছিল তা বিশ্বাস করার কোন বাইবেলের কারণ নেই। যারা এই ধারণার বিরোধিতা করে যে, যীশুর সৎ ভাই এবং সৎ বোন ছিল তারা শাস্ত্র পড়েনি। মরিয়মের চিরকালের কুমারীত্বের একটি পূর্বকল্পিত ধারণা থেকে ছিল, যা নিজেই স্পষ্টত অ-বাইবেলীয় আর তাঁদের শিক্ষনীয় পুস্তক ও (CCC 499) খণ্ডন হয়ে গেল। এটা অবশ্যই শাস্ত্রের উপর বাধ্য করা উচিত, যা শাস্ত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে তার বিপরীতে।

ঈশ্বর সকলকে বুঝার মত জ্ঞান প্রদান করুন। 
আমেন।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ