Header Ads Widget

Responsive Advertisement

মেয়েদের কি মাসিকের সময় চার্চে যাওয়া উচিত?| Should girls go to church during menstruation?

মেয়েদের কি মাসিকের সময় মন্ডলীতে যাওয়া উচিত?

লেখকঃ- এসো বাইবেল শিখি/ শিখুন।

আজকের বিষয় বস্তু আমাদের প্রিয় বিশ্বাসী ভগিনীগণদের উদ্দেশ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা বলে এটি নয় এই বিষয় বস্তু আমাদের প্রিয় ভ্রাতাবিন্দদের কাছে মহত্ত্ব রাখে না তা কিন্তু নয়। অবশ্যই মহত্ত্ব রাখে। অনেক খ্রিস্টান মনে করেন যে, যখন কোন মেয়েদের মাসিক প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখন তারা অপবিত্র থাকে মানে অশুচি থাকে তাই তাদের এমন কোন পবিত্র জিনিসের হাত বাড়ানো উচিত নয়।

Photo by Thomas Vitali on Unsplash 

পিরিয়ড কি বাংলা/ মাসিক কি (what is menstruation in Bengali)


পিরিয়ড বা মাসিক সাধারণত মেয়েদের একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। যেহেতু প্রতি মাসে এটি হয় তাই বাংলায় একে মাসিক বলা হয়ে থাকে। এবং এটি ইংরেজিতে মেনস্ট্রুয়েশন (Menstruation) বলা হয়। প্রতি চন্দ্রমাস পরপর হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রকে এক ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এই পরিবর্তনের ফলে যোনিপথে রক্ত ও জরায়ুর নিঃসরণ প্রবাহিত হতে থাকে। আর এটাকে ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড বলা হয়। একটি মেয়ে প্রধানত তার পিরিয়ড বা মাসিকের কারণে গর্ভধারণ করতে সক্ষম হয়।

বাইবেলে পিরিয়ড/ মাসিক (Menstruation in the Bible)


এই শুচি-অশুচি প্রথা বিশ্বে নানা ধর্মীয় সম্প্রদায় দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে মেয়েদের মাসিকের সময় নিচু চোখে দেখা হয়। তাছাড়া এই বিষয় বাইবেলের পুরাতন নিয়মের এই পুস্তকে কিছু লেখা রয়েছে; (লেবীয় পুস্তক ১৫:১৯-৩০)। বিশেষ করে যেখানে মেয়েদের মাসিকের সম্পর্কে লেখা রয়েছে। এই বাক্যে যেমনই চোখে পড়ে, অমনি মেয়েদের মনেতে এই প্রশ্ন খুব বেশি নাড়া দিয়ে থাকে “আমি কি আমার পিরিয়ডের সময় মন্ডলীতে যেতে পারি?
 এবং অনেকে এই প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে থাকে, কারণ পুরুষরা চার্চে যাজক পদে অধিষ্ঠিত। পুরুষদের কাছে এ ব্যাপারে তেমন একটা খোলামেলা বলাও সম্ভব নয়। 
আমাদের প্রিয় ভগিনীগণ ঈশ্বরের ধন্যবাদ হোক, আজকে এই প্রশ্নের উত্তর পেতে চলেছেন।

এই উওর বাইবেল ভিত্তিক বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করার পূর্বে সকল ভ্রাতা ও ভগিনীগনদের জানিয়ে রাখি। বাইবেল এই প্রশ্নের উত্তর তেমন একটা বিস্তারিত ভাবে দেয় না, মাসিক হওয়া সময় মেয়েদের মন্ডলীতে যাওয়া উচিত কিনা বলে! তবে বাইবেলের এমন কিছু বাক্যে রয়েছে যা থেকে পরিস্কার হয়ে উঠে বা প্রমাণ করা যায়, হাঁ মেয়েদের যখন মাসিক প্রক্রিয়া শুরু, তখন তারা মন্ডলীতে যেতে পারবে। এখন অনেকে বলতে পারে লেখক মহাশয়/ মহাশয়া আপনি বিভ্রান্তিকর শিক্ষা দিচ্ছেন, কারণ বাইবেলের পুরাতন নিয়মে মেয়েদের মাসিকের সময় মন্ডলীতে যাওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য বলি তা কিন্তু নয়। মেয়েরা মাসিকের সময় কেন মন্ডলীতে যেতে পারে তার উওর বাইবেল খুবই চমৎকার একটি সত্য ঘটনার উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন। চলুন সেই ঘটনা একটু জানা যাক।

নূতন নিয়মে মাসিক চক্রের সময় মহিলাকে চার্চে প্রবেশ করতে বাধা দেয় না (The New Testament does not stop the woman to enter the church during the menstrual cycle) 


আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে যখন, এই জগতের সৃষ্টিকর্তা অর্থাৎ ঈশ্বর, এই পৃথিবীতে ঈশ্বর পুএ যীশুর মাধ্যমে এই জগতে এসেছিলেন (যোহন ১:১,১৪)। এখানে আবার অনেকের প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায়। লেখক মহাশয়/ মহাশয়া কেন যীশুকে ঈশ্বর বলে ঘোষণা করছেন কি? যীশু কোন ঈশ্বর নয়। দয়া করে বিভ্রান্তিকর শিক্ষা দিবেন না। যীশুকে কেন ঈশ্বর বলা হয়! এই প্রশ্নের উত্তর জানতে এখানে লিঙ্ক দেখুন; “যীশু কি ঈশ্বর?” “যীশু কে ছিলেন?” “যীশুকে কেন ঈশ্বর বলা হয়?” তিনি যখন জগতে ছিলেন, তখন নানা অলৌকিক কাজ করেছিলেন যেমন; মৃত্যু ব্যক্তিকে জীবন দান করা, বোবাকে কথা বলার সামর্থ্য, অন্ধকে দেখার সামর্থ্য, লেংরাকে চলার ক্ষমতা, এই রকম নানা অলৌকিক কাজ করেছিলেন। একদিন কি হয়েছে! একজন স্ত্রীলোক সে দীর্ঘ বারো বছর নাগাদ রক্তস্রাব রোগে ভুগছিলো। সে তার যতটুকুই সামর্থ্য ছিল সব কিছু ব্যায় করে ফেলে। সব কিছু ব্যায় করার ফলে ও সেই রোগ থেকে সুস্থই হচ্ছিল না। একদিন শুনতে পেল যীশু আসছে বলে! সেই স্ত্রীলোক বিশ্বাস করত, যদি আমি যীশুর পরা কাপড় ও স্পর্শ করে ফেলি তাহলে নিশ্চয়ই আমি সুস্থ হয়ে যাব। আর আমরা দেখি তাহাই হলো যেমন এই বাক্য বলে যথা; (লুক ৮:৪৪)।

এখানে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যীশুকে স্পর্শ করার মাএই সেই রক্তস্রাব স্ত্রী লোকটি তাতক্ষনিক সুস্থতা লাভ করে। এখানে থেকে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়, যখন মেয়েদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যা প্রজননের সঙ্গে সম্পর্কিত তা শুরু হয়, তখন ঈশ্বর তা অপবিত্র বলে কোন কিছু মনে করে না। কারণ একজন নারীকে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন। সেই ব্যবস্থা স্বয়ং ঈশ্বর দিয়েছেন যেন মেয়েদের মাসিক প্রক্রিয়া হয় অর্থাৎ প্রজনন প্রক্রিয়া হয়। যখন ঈশ্বর/ যীশু এই প্রক্রিয়া পক্ষপাতী নন। যীশু সেই স্ত্রীলোকটি এই ভাবে বলেননি; তুমি আমায় কেন স্পর্শ করলে? তুমি জানো না! পুরাতন নিয়মে (লেবীয় ১৫:১৯) পদে লেখা রয়েছে মেয়েদের যখন মাসিক/ রজঃস্রাব/ রজস্বলা/ রক্তস্রাব/ হয় সে সময় অশুচি থাকে। তখন তার উচিত সে যেন কাউকে স্পর্শ না করে। তবে তুমি কেমন করে আমাকে স্পর্শ করলে কি? এইভাবে যীশু কোন কিছু সেই স্ত্রীলোকে বলেছিলেন কি? উওর মটেও না বরং যীশু কি বলেছিলেন তা এই বাক্যে সুস্পষ্ট ভাবে বলে যথা; (মার্ক ৫:৩৪)। 

আমরা দেখতে পাচ্ছি যীশু সেই স্ত্রীলোটিকে আশির্বাদ করছেন। আমরা দেখতে পেলাম, মেয়েদের যখন মাসিক প্রক্রিয়া শুরু হয় ঈশ্বর/ যীশু তা অপবিত্র বলে কোন কিছু মনে করে না। তাহলে আমি আর আপনি কে, যে মেয়েদের উপরে নিয়ম চাপিয়ে দেই। আর গলা ফাটিয়ে বলি  মেয়েদের মাসিক প্রক্রিয়া শুরু সময় মন্ডলীতে যাওয়া উচিত নয়। যখন কোন মেয়ের মাসিক প্রক্রিয়া শুরু হয় তাদেরকে নিচু চোখে দেখা উচিত নয়। এই বাক্যে থেকে সুস্পষ্ট হয়, হাঁ মেয়েদের যখন মাসিক প্রক্রিয়া শুরু হয়, তারা স্বাভাবিক দিনের মতোই মন্ডলীতে যেতে পারে। মাসিক প্রক্রিয়া শুরু হলেই যে তাঁর (ঈশ্বর/ যীশুর) কন্যারা অশুচি হয় তা কিন্তু নয়। এই বিষয় নিয়ে বুঝতে আর একটি খুব সুন্দর বাক্যে সহায়তা নেওয়া যেতে পারে, যা শুচি আর অশুচির পার্থক্য বোঝা যায়। উদাহরণস্বরূপ এই বাক্যে দেখুন; (মথি ১৫:১১, ১৫:১৮)। প্রভু যীশুর এই বাক্যের অনুরূপ, মানুষ তখন অশুচি হয়, যখন হৃদয় থেকে খারাপ কিছু বের হয় নাকি মাসিক চলাকালীন! আমরা পূর্বেই জেনেছি মাসিক প্রক্রিয়া হলো; “একটা প্রজননের শারীরিক প্রক্রিয়া” মাটির দেওয়া শরীর এই মাটিতেই বিলীন হয়ে যাবে, কিন্তু ঈশ্বরের দেওয়া আত্মায় ঈশ্বরের কাছেই চলে যাবে যেমন বাক্য বলে যথা; (উপদেশক ১২:৭)। 

মাসিক বা পিরিয়ড সম্পর্কে বাইবেলের শিক্ষা (Bible teachings about menstruation)


বাইবেল বিশ্বাসীদের সম্পর্কে কি বলে সেই বাক্যেও একটু দেখে নেওয়া যাক, যা থেকে আমাদের উওর নির্ণয় করতে আরো সহজ হয়ে দাঁড়াবে। এই বাক্যে দেখুন যথা; (১ করিন্থীয় ৬:১৯)। এই কি বাক্যে বিশ্বাসীদের কি বলছে! বাক্যে বিশ্বাসীদের বলছে তোমরা ঈশ্বরের মন্দির। এই মন্দির স্বয়ং ঈশ্বর বসতি করেন। এই মন্দির কি শুধুমাএ পুরূষদের বোঝায় নাকি? উওর মটেও না। এই মন্দির মানুষ মাএ সকলকেই বোঝায়, তা পুরুষ হোক আর নারী হোক এমনকি নপুংসকদের অর্থাৎ (হিজড়া) বোঝায়। ঈশ্বর আমাদের মধ্যে বসতি করেন, ঈশ্বরের সেই প্রিয়তম কন্যার যখন মাসিক প্রক্রিয়া শুরু তো কিভাবে অশুচি হয় কি? মটেও অশুচি হয় না। একজন মেয়ের মাসিক প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলেই, ঈশ্বর এই মন্দির থেকে বের হয়ে যান, আর মাসিক প্রক্রিয়া শেষ হলে ঈশ্বর আবার প্রবেশ করেন তা কিন্তু নয়। নিঃসন্দেহে মেয়েরা মাসিকের সময় মন্ডলীতে যেতে পারে। ঈশ্বর আপনার মধ্যে পবিত্র আত্মার সহকারে থাকেন। শারীরিক ভাবে কেউ অশুচি হয় না। অশুচি আত্মিকভাবে হয়। 

অবশ্যই ঈশ্বর পুরাতন নিয়মে কিছু শুচি ও অশুচি কথা বলেছিলেন। এটি ঈশ্বরের পবিত্রতার মানদণ্ড নির্ধারণ করার জন্য, ঈশ্বর কত পবিত্র বলে! সেই পবিত্রতা পালন করেই ঈশ্বর তাঁর পবিত্র প্রজা ঈস্রায়েলদের প্রতিনিধি করার ছিলো। আর সমগ্ৰ জগতে পাপে পতিত মানুষ কাছে, ঈশ্বরের মানদণ্ড রেখে সুসমাচার প্রচারক করার ছিলো‌। মানদণ্ড বজায় না রাখতে পারলে ঈশ্বর তাদের দণ্ডও নির্ধারন করে দিয়ে ছিলেন। তখন কার দিনে ঈশ্বর মেয়েদের জন্য রজস্বলা মানে মাসিক প্রক্রিয়া সময় তাদেরকে পবিএ আবাসে যাওয়া নিষিদ্ধ হয়েছিল। লেবীয় ১৫:৩১ পদ অনুয়ায়ী যদি কোন মহিলা ওই অবস্থায় সেই পবিত্র আবাস প্রবেশ করে তখন মৃত্যু পর্যন্ত হওয়া সম্ভবনা ছিলো। কিন্ত আজ স্বয়ং সেই পবিত্র ঈশ্বর আপনার মধ্যে বাস করেন। সুতরাং আমরা সুস্পষ্ট হয়েছি, হাঁ একজন মেয়ের যখন মাসিক প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন অবশ্যই মন্ডলী যেতে পারে। 

ঈশ্বর সকলকে বোঝার মতো জ্ঞান প্রদান করুন। 
আমেন।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. মহিলাটি স্বাভাবিক মাসিকে নয় বরং অসুস্থতাজনিত কারণে রোগগ্রস্ত ছিলেন, সুতরাং দুটি বিষয়কে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। যীশু পুরাতন ব্যবস্থাকে সংহত করেছেন বাতিল করেননি।

    উত্তরমুছুন

আপনাদের কিছু প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই
আমাদের জানান।
ধন্যবাদ ‌।