যীশু কি ঈশ্বর?
লেখকঃ- এসো বাইবেল শিখি/শিখুন।
আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া এই প্রশ্নটিকে অনেকটাই চোখে দেখতে পাওয়া যায়। সমালোচকদের একটি দুর্দান্ত দাবি হল যে, যীশু ঈশ্বর ছিলেন না। সমালোচকরা বলে খ্রিষ্টানরা খ্রিষ্টানরাই যীশুকে ঈশ্বর বানিয়ে দিয়েছে। অনেকে যীশুকে নিয়ে নানা কথা বলে। কেউ বলে যীশু একজন ভাববাদী/ নবী ছিলেন। যীশু ভালো শিক্ষক ছিলেন। যীশু ভালো মানুষ ছিলেন। যীশু একজন জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। যীশু শুধুমাত্র ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন। কেউ আবার বলে যীশু কাল্পনিক ব্যক্তি ছিলেন। অধিকাংশ মানুষ যীশুকে ঈশ্বর হিসেবে অস্বীকার করে বসে এখন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক তবে যীশু কি ঈশ্বর ছিলেন? উওর হাঁ যীশু ঈশ্বর ছিলেন। এই বিষয় বোঝানো জন্য একটি বাইবেলের ঘটনার কথা বলি যা থেকে প্রমাণিত হয় যীশু ঈশ্বর ছিলেন।
যীশু এবং শমরিয়া মহিলা (Jesus and the Samaritan woman)
এক দিন কি হয়েছিল! যীশু যখন শমরিয়ার স্ত্রীলোকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। যীশু সেই স্ত্রীলোকের সব কিছু বলে দিচ্ছিলেন, তখন সেই শমরিয়ার স্ত্রীলোক শুনে অবাক হয়ে যান। তখন স্ত্রীলোকটি বলছে দেখছি আপনি ভাববাদী। কথা বলতে বলতে স্ত্রীলোক ঈশ্বরের আরাধন সম্বন্ধে কথা বলে এবং প্রভু যীশু সেই স্ত্রীলোকে আরাধন সম্বন্ধে বিস্তারিত বোঝান যে, ঈশ্বরকে কিভাবে আরাধন করা উচিত বলে। তখন স্ত্রী লোকটি বলল, আমি জানি মশীহ আসছেন, যাকে খ্রিষ্ট বলা হয়, তিনি যখন আসবেন সব কিছু আমাদের জানাবেন। তখন প্রভু যীশু উওরের সেই শমরিয়ার নারীকে কি বলেছিল তা জানতে এই বাক্যে দেখুন যথা; (যোহন ৪:২৬)। এই বাক্যেয় প্রভু যীশু সেই শমরিয়ার স্ত্রীলোকে বোঝাতে চাইছিলেন যে, তোমরা যেই মশীহ বা খ্রিষ্টর জন্য অপেক্ষা করছো তা স্বয়ং আমিই তিনি। মানে এখানে প্রভু যীশু ঈশ্বর হওয়ার ঘোষণা করছেন তিনি উদ্ধারকর্তা।
যীশুকে মশীহ বা ঈশ্বর বলে ইহুদিদের আপত্তি (Jewish Objections to Jesus being the Messiah)
এক দিন যখন যিহুদীরা প্রভু যীশুর সঙ্গে বাদানুবাদ করছিলেন, তখন যিহুদীদেরা প্রভু যীশুকে জিজ্ঞাসা করল; তুমি কি আমাদের পিতা আব্রাহাম থেকেও মহান? যিনি মরে গেছেন। তো, তুমি নিজের সম্পর্কে কি বলে? যথা; (যোহন ৮:৫৩)। উওরের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কি বলেছিলেন তাও এই বাক্যে দেখুন; (যোহন ৮:৫৬-৫৭)। এই বাক্যেয় প্রভু যীশু খ্রীষ্ট স্পষ্ট রুপে যিহুদীদেরকে বলেছিল যে, অব্রাহাম যাকে দেখেছিল সেই আমিই ছিলাম। অব্রাহাম আমাকে দেখে অনেক খুশি হয়েছিল। তখন, যীশুর কথা শুনে যিহুদীদের প্রতিক্রিয়া ছিল, এটা কি করে সম্ভব তোমার তো ৫০ বছর হয়নি আর তুমি অব্রাহামকে দেখেছো! তখন যীশু আবার স্পষ্ট রুপে তাদের জানায় যে; আমি আব্রাহামের জন্মের আগে থেকেই আমি আছি। যথা; (যোহন ৮:৫৮)। এই বাক্যে থেকে প্রমাণিত হয় যীশুই ঈশ্বর ছিলেন।
যীশু ঈশ্বর বাইবেলের বাক্যে (Jesus is God verses)
যীশুই ঈশ্বর ছিলেন উদাহরণ এই বাক্য যথা; (যোহন ১:১)।এই বাক্যে যদি সাধারণত ভাষায় বলা হয় তা এই ভাবে হবে। আদিতে যীশু ছিলেন, এবং যীশু ঈশ্বরের সাথে ছিলেন, এবং যীশু ঈশ্বর ছিলেন। এছাড়াও এই বাক্যে দেখুন; (যোহন ১:১৪)। এই পদ স্পষ্টভাবে বলে যে, যীশু মানুষ হয়ে আসা ঈশ্বর। অর্থাৎ এই বাক্যে থেকে ও প্রমাণিত হয় যে, যীশু ঈশ্বর ছিলেন। এছাড়া এই বাক্যে দেখুন; (যোহন ১০:৩০)। এই বাক্যেয় যীশু পরিস্কার ভাষায় নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবী করেছিলেন। কিন্তু যীশুর এই দাবীর ফলে যিহুদীরা পাথর তুলে নিয়েছিল। যীশু তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে ছিল কেন আমায় পাথর মারতে চাইছো? (যোহন ১০:৩২)। দেখুন উওরের ইহুদীরা কি বলেছে; (যোহন ১০:৩৩)। এই বিবৃতি স্পষ্টভাবে দেখায় যে ইহুদিরা বুঝতে পেরেছিল যে, যীশু নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করেছেন। বরং যীশু যিহূদীদের সংশোধন করে দেননি যে, নানা আমি এটি কখন বললাম যে, আমি ঈশ্বর বলে মানে আমি আর আমার পিতা এক বলে! আপনারা মনে হয় ভূল শুনেছেন, যীশু এই রকম কোন কিছুই বলেননি যা যীশু দাবি করছিলেন আমি আর পিতা এক বলে! যা থেকে প্রমাণিত হয় যীশু ঈশ্বর ছিলেন।
সন্দেহ থোমার বিশ্বাস ঘটনা (Doubting Thomas Bible Story)
একদিন যীশু যখন মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হয়ে শিষ্যদের কাছে আবির্ভূত হলেন, তখন একজন শিষ্য নাম ছিল থোমা, যাকে বলে দিদুম। শিষ্যরা এসে থোমাকে বললেন আমরা যীশুকে দেখেছি, এবং তিনি জীবিত আছেন, শিষ্যদের এই কথা শুনে থোমার বিশ্বাস হল না। তখন থোমা স্বামী বিবেকানন্দ যেমন বাণী বলেছিলেন ঠিক সেই ভাবে কথা বলেন। থোমা বললেন; “যতক্ষণ না আমি তাঁর দুই হাতে পেরেকের চিহ্ন না দেখি, এবং সেই চিহ্নের মধ্যে আংগুল না দিই, তাঁর পাঁজরে হাত না দিই ততক্ষণ আমি কোনমতেই বিশ্বাস করব না।” খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা মনে রাখবেন, এখানে থোমা এবং স্বামী বিবেকানন্দ তুলনা করা হয়েছে তা কিন্তু নয়। থোমা'কে স্বামী বিবেকানন্দ সাথে তুলনা করারও সম্ভব নয়। এঁদের বিশ্বাস আকাশ - পাতাল পার্থক্য রয়েছে। বড় কথা হচ্ছে থোমা যীশু অর্থাৎ ঈশ্বরের শিষ্য ছিলেন। থোমা নিজের জেদে অটল ছিলেন, তিনি যতক্ষণ যীশুকে স্বচক্ষে না দেখেন ততক্ষণ কোন মতে বিশ্বাস করতে নারাজ।
আট দিন পরে শিষ্যরা যখন একটি ঘরে ছিলেন, তখন তাঁদের সঙ্গে শিষ্য থোমাও ছিলেন। তখন যীশু হঠাৎ দ্বার বদ্ধ ঘরের মধ্যে আসলেন (যোহন ২০:২৬)। এখানে যীশু যে ঈশ্বর ছিলেন তা প্রমাণিত হয়ে যায়। যীশু অলৌকিকভাবে বন্ধ ঘরে প্রবেশ করলেন, তিনি যদি ঈশ্বর না হোন তাহলে সেই বদ্ধ ঘরে প্রবেশ করলেন কিভাবে? তিনি স্বয়ং ঈশ্বর ছিলেন। ঈশ্বরেরই সেই সামর্থ্য আছে যে একই সময়ে সকলের কাছে প্রকাশিত হতে পারেন। তাই যীশু বলেছিলেন; “যেখানে আমার নামে দুই কি তিন জন মিলিত হয়, সেখানে আমি তাদের মাঝে রয়েছি” [মথি ১৮:২০] যীশুর সেই ক্ষমতা আছে ধরা যাক কোন একজন ব্যক্তি ভারত থেকে ডাকছে, কেউবা বাংলাদেশ কেউবা আমেরিকা থেকে কেউবা ইসরাইল থেকে যীশু একই সময় সবার সামনে উপস্থিত হতে পারেন, তার প্রমাণ ও যীশু সেই বন্ধ ঘরে প্রবেশ করে দেখান।
থোমা যীশুকে ঈশ্বর অঙ্গীকার (Thomas confesses Jesus as God)
যীশু এসে থোমাকে বললেন “তোমার আংগুল এখানে দিয়ে আমার হাত দু'খানা দেখ এবং তোমার হাত বাড়িয়ে আমার পাঁজরে রাখ। অবিশ্বাস কোরো না বরং বিশ্বাস কর।” থোমা যীশুকে দেখে বিশ্বাস করেছিল, দেখার পর থোমা যীশুকে বললেন; “প্রভু আমার, ঈশ্বর আমার!” (যোহন ২০:২৮)। এখানে উল্লেখ্য যে যীশু, কখনোই তাঁর দেবত্বের দাবিকে অস্বীকার করেননি। অথাৎ যীশু এটা কখনো বলেননি আমি ঈশ্বর নই! তুমি কেন আমায় ঈশ্বর বলছো! যীশু কি এইভাবে কিছু বলেছিলো? মটেও না যীশু কিছু বলেননি, বরং যীশু থোমার উপাসনা স্বীকার করে ছিলেন। এই থেকে প্রমাণিত হয় যীশুই ঈশ্বর ছিলেন।
যীশু খ্রীষ্ট তাঁর মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন (Jesus predicts his death verses)
যীশু নিজের মৃত্যুর সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করে তা পূর্ণ করেও প্রমাণিত করে ছিলেন তিনি ঈশ্বর ছিলেন যেমন; মৃত্যুর কয়েকটি ভবিষ্যতবাণী বাক্য যথা; (মথি ১৬:২১, মার্ক ৮:৩১, লূক ৯:২২, যোহন ২:১৯, লূক ১৮:৩৩-৩৪)। কোন মানুষ কি নিজের মৃত্যু কি ভাবে হবে? কেন হবে? কোথায় হবে? তা কি বলতে পারবে? নিশ্চয় না। যদি তিনি ঈশ্বর ছিলেন না, তবে কি করে নিজের মৃত্যুর সম্বন্ধে নিখুঁত ভবিষ্যৎবানী করেন। প্রভু যীশুর মুখ হইতে নির্গত বাক্য দ্বারা প্রমাণিত হয়, তিনিই ঈশ্বর ছিলেন।
যীশু সৃষ্টিকর্তা বাইবেলের বাক্যে (Jesus as Creator verses)
বাইবেল পরিস্কার ভাবে বলে যীশুই সৃষ্টিকর্তা ছিলেন, এই সকল বাক্যে অনুরূপ যথা; (যোহন ১:৩, ১ করিন্থীয় ৮:৬, কলসীয় ১:১৫-১৬)। এমন আরও বহু বাক্যে রয়েছে যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, যীশুই ঈশ্বর ছিলেন। কিন্তু এই সকল বাক্যে দেখিয়ে সমালোচকদের মন সন্তুষ্টি পায় না। কিন্তু খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসী হয়ে আপনাকে এটা বিশ্বাস করা প্রয়োজন যে, যীশুই ঈশ্বর ছিলেন। যীশু'কে ঈশ্বর হিসেবে অস্বীকার করলে উদ্ধারে প্রশ্ন চিহ্ন দাঁড়িয়ে যায় মানে আপনার সম্ভব উদ্ধার হয়নি। উদ্ধার যখন হয় না তখন আপনি স্বর্গে ও যেতে পারবেন না এই বাক্যের অনুরূপ যথা; (যোহন ৮:২৪)। সমালোচকেরা চিৎকার করে বেড়ায় নানা যীশু কোন ঈশ্বর নয়। যীশুকে খ্রিষ্টানরা ঈশ্বর বানিয়ে দিয়েছে। সমালোচকদের সমস্যা বোঝা যায় কারণ বাইবেল বলে পবিত্র আত্মা বিহীন ঈশ্বরের আত্মিক বিষয় উপলব্ধি করা যায় না। যখন বুঝতে পারবে না তখন তো চিৎকার-ই করবে। তখন নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ দেখার জন্য উঠে পড়ে, এছাড়া আর কি করতে পারে। অনেক সমালোচকেরা তো ডিবেট করে বসে যীশুর ঈশ্বরত্ত্বের সম্পর্কে। যখন ডিবেট করে তখন বাইবেলের এমন কিছু বাক্যে তাদের সুবিধার্থে ব্যবহার করে তা বলা যায় না। যদি কোন খ্রিষ্টান বিশ্বাসে দুর্বল থাকে আর তাঁদের তুলে ধরা বাক্য দেখে তখন সেই খ্রিষ্টান হতভম্ব হয়ে যায়। আর ভাবতে শুরু করে দেয়, হ্যাঁ তো বাইবেলে এটা লিখা আছে।
উপসংহারঃ আমরা সম্পূর্ণ লেখাটি থেকে জানতে পারলাম, বা বুঝতে পারলাম যে, বাইবেল ক্লিয়ার করে বলে
যীশু ঈশ্বর ছিলেন। সুতরাং যীশুই ঈশ্বর।
ঈশ্বর সকলকে আশীর্বাদ করুন।।
0 মন্তব্যসমূহ
আপনাদের কিছু প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই
আমাদের জানান।
ধন্যবাদ ।