বাইবেল নতুন বছর সম্পর্কে কি বলে?
লেখকঃ এসো বাইবেল শিখি/শিখুন।
এই বিষয় বস্তু আত্মিকভাবে তেমন কিছু মহত্ত্ব তো রাখে না, কিন্তু তবুও এই বিষয় বস্তু সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কারণ আমাদের দেশ ও বিদেশে ঠিক যখন ঘড়ির কাঁটা ১২:০০ বাজে তখন আকাশে রঙবেরঙের আতস বাজি দেখতে পাওয়া যায় বা শব্দ শুনা যায়। এবং রাত পোহালেই পরের দিন ভোরবেলায় মাঝ রাস্তায় রঙবেরঙের লেখা দেখতে পাওয়া যায়, যেখানে লেখা থাকে Welcome 2022 & Good By 2021 গান-বাজনা, নাচে-গানে, পার্টি-টার্টি, তাছাড়া আমাদের যুবক ও যুবতীরা একটু দু'পা' আগে চলে অর্থাৎ গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড নিয়ে সময় কাটা। শুনা যাবে একের অপরের নতুন বছর শুভেচ্ছা Happy New Year. এখন সোশ্যাল মিডিয়া যুগ, সোশ্যাল মিডিয়া দেখা যাবে নানা ধরনের পোস্ট তা ভিডিও হোক আর যাই হোক অভিনন্দনের ভরপুর পোস্ট। এইভাবে ১লা জানুয়ারি অর্থাৎ নতুন বছর খুবই ধূমধামে পালন করা হয়। এখন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক তবে খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের নতুন বছর পালন করা উচিত কিনা! বা নতুন বছর সম্পর্কে বাইবেল কি বলে!
এই বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করার পূর্বে আমরা এই নতুন বছরের ইতিহাস সম্পর্কে একটু সংক্ষেপে ধারণা দিতে চাই। ইতিহাস জানা বাঞ্ছনীয় তো নয়, তবে ইতিহাস জানলে জ্ঞান জন্য খুবই ভালো হয়। প্রথমে জানা যাক এই ইংরেজি নতুন বছরের পালনের ইতিহাস। এই নতুন বছর উৎপত্তি কিভাবে?
নতুন বছরের ইতিহাসঃ
একটি নতুন বছরের উৎসব প্রথম পরিচিত রেকর্ডটি প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে মেসোপটেমিয়া। তথা আজ থেকে প্রায় ৪০০০ হাজার বছর পূর্বে, যেখানে ব্যাবিলোনিয়ায় নতুন বছর (আকিতু) নামে পালন করা হতো। এই আকিতু (Atiku) ব্যাবিলোনিয়দের একটি বিশাল একটি ধর্মীয় উৎসব ছিলো। যেই উৎসব ব্যাবিলনীয় আকাশ দেবতা মারদুকের (Marduk) পৌরাণিক বিজয় উদযাপন করা হয়, যেখানে সমুদ্রের দুষ্টু দেবি তিয়ামাত পরাজিত করেছিলেন, সেই উদ্দেশ্য এই দিন উদযাপন করা হয়। তখন কার দিনে এই নতুন বছর পালন করা হতো নূতন চাঁদ দেখে, অর্থাৎ মানুষ যেদিন বর্ষ গণনা করতে শিখলো, সেদিন চাঁদের হিসাবেই শুরু করে বর্ষ গণনা। নতুন বছর পালন করা দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে রোমানদের মাধ্যমে অর্থাৎ বর্তমান দিনে যারা রোমান ক্যাথলিক।
রোমের একজন বিখ্যাত সম্রাট ছিলেন যার নাম রমুলাস (Romulus)। তিনি ছিলেন রোমের প্রথম সম্রাট। তিনিই নাকি আনুমানিক ৭৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে রোমান ক্যালেন্ডার চালু করার চেষ্টা করেন। মজার ব্যাপার হলো; পূর্বে রোমানদের মাস কিন্তু ১২টি ছিলো না, তখন তাদের মাস ছিলো ১০টি, মার্চ মাস থেকে তাদের বছর গণনা শুরু হতো অর্থাৎ ১লা মার্চ নতুন বছর পালন করা হতো। পরে রোমান সম্রাট নুমা পম্পিলিয়া (Numa Pompilius) দ্বারা ২টি মাস অর্থাৎ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস যোগ করা হয়। সম্রাট নুমাই জানুয়ারি মাসকে বছরের প্রথম মাস বলে অভিহিত করেন। তখনকার দিনে আমাদের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস দিন গণনা ধার্য বিরূপ ছিলো। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এইভাবে চলে, পরে যখন রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার (Julius Caesar) ৪৬ খ্রীস্ট পূর্বাব্দে লক্ষ্য করেন যে পুরানো রোমান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে সূর্যের কোনো সামঞ্জস্য নেই।
তখন ক্যালেন্ডারে সামঞ্জস্য আনতে তৎকালীন জ্যোতির্বিদদের পরামর্শ নেন। পরবর্তী এ ক্যালেন্ডার পরিচিত হয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে। রাজা জুলিয়াস সিজারই সংস্কারের ফলেই ১লা জানুয়ারিকে বছরের প্রথম দিন বলে ঘোষণা করেছিলেন। আংশিকভাবে মাসের নাম জানুস (Janus) দেবতার নাম থেকেই জানুয়ারি মাসে নাম আসে। পরে আবার এই জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করা হয়। রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি (Pope Gregory XIII) ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতির্বিদদের পরামর্শে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন। পুনরায় ১লা জানুয়ারিকে বছরের প্রথম দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, তারপর থেকেই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার (Gregorian Calendar)। পোপ গ্রেগরি প্রববর্তিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মোটামুটি একটি নিখুঁত হিসাবে আমাদের পৌঁছে দেয়। বর্তমান দিনে প্রায় গোটা বিশ্ব যেই ক্যালেন্ডার মেনে চলে তা হল গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার।
আমরা নতুন বছর পালন করার ইতিহাস দেখলাম। এখন এই বিষয় নিয়ে বাইবেল কি বলে তা জানার চেষ্টা করি। প্রথমে জানিয়ে রাখি বাইবেল এই নতুন বছরের সিদ্ধান্তের ধারণার পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলে না। এই বিষয় নিয়ে বাইবেলে কোন কিছুই উল্লেখ্য নেই। কারণ 31st ডিসেম্বর মধ্যরাতে রহস্যময় কিছুই ঘটেনি, আর নাই বা 1st জানুয়ারিতে, ৩১শা ডিসেম্বর এবং ১লা জানুয়ারির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আপনি নতুন বছর উদযাপন করুন বা না করুন আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ১লা জানুয়ারি আসলেই যে, নূতন কিছু স্পেশাল হয়ে উঠে তা কিন্তু নয়, কারণ দিন তো ঈশ্বর-ই সৃষ্টি করেছেন। স্পেশাল তখন হয়, যখন ঈশ্বর আপনাকে পরে দিন দেখার সুযোগ করে দেন। আর সেই দিন আপনি কিভাবে ব্যবহার করেন সেটাই মহত্ত্ব রাখে। পরে দিনটি কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা এই বাক্যে দেখুন; (ইফিষীয় ৫:১৬, ইফিষীয় ৫:১৭ BERV)।
ঈশ্বর আপনাকে দিয়ে কি করতে চান! তা জানার জন্য আপনাকে বাইবেল পড়তে হবে। বাইবেল মাধ্যমেই ঈশ্বর/ যীশু আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান, কারণ বাক্যেই তো স্বয়ং ঈশ্বর/ যীশু যেমন সুস্পষ্ট বাক্যে বলে; (যোহন ১:১)। ঈশ্বর/ যীশুর কাছে যত কাছে আসবেন, ততই ঈশ্বর/ যীশু আপনার কাছে আসবেন আর তখনই আপনি বুঝতে পারবেন, ঈশ্বর/ যীশু আপনার মাধ্যমে কি করতে চান বলে! অবশ্যই আপনি নতুন বছর পালন করতে পারেন। কিন্তু জগত যেইভাবে পালন করে সেইভাবে নয়। যেমন জগত পালন করে; এই নতুন বছরে পার্টি আয়োজন করে বসে, যেই পার্টিতে নানা ধরনের মাদ্যক জাতীয় জিনিস নিয়ে থাকে। আর মাদক জাতীয় কিছু সেবন করে মাতাল হয়ে বেসামাল হয়ে যায়। কেউ আবার বিশেষ করে যুবক ও যুবতীদের কথা বলছি, তাঁরা গার্লফ্রেন্ড ও বয়ফ্রেন্ড যেন একটি লাইসেন্স প্রাপ্ত সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে নানা ভাবে এই দিনকে উপভোগ করার চেষ্টা করে। যেখানে যুবক ও যুবতীদের দ্বারা ঈশ্বরের ইচ্ছার বিপরীতে অনেক কিছু করা হয়। কেউ আবার জাগতিক সিনামা দেখে, এই দিনকে উপভোগ করে। কেউ আবার জাগতিক সিনেমা কোন গান-টান লাগিয়ে তা Dj-Tj লাগিয়ে বেসামাল হয়ে ডান্স-টান্স করে দিনকে উপভোগ করে থাকে। জগত নানা দৃষ্টি ভঙ্গি দিয়ে এই দিন উদযাপন করে। এই ভাবে খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের নতুন বছর উদযাপন করার কোনো মহত্ত্ব রাখে না। এইভাবে পালন করা বিশ্বাসী আর নন-খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসী কোনো পার্থক্য উপলব্ধি করা যায় না। খ্রীষ্টিয় বিশ্বাসীরা জগতের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কত মহত্ত্ব রাখে তা এই বাক্যে দেখুন; (১ পিতর ২:৯-১০, ১ পিতর ২:৫)।
ঈশ্বর চায় এই বাক্যের অনুরূপ আমাদের সাহায্য আত্মিক বলি উৎসর্গ হোক। যেই আত্মিক বলি আমাদের কাজের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তাই ঈশ্বর চায় আমরা যেন জগতের মায়া থেকে বেরিয়ে আসি (২ করি ৬:১৭)। আমরা যখন জগতের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে চলতে শুরু করে দেই, তখন ঈশ্বর/ যীশুর দীপ্তি আমাদের মধ্যে নিভতে শুরু করে দেয়। বাইবেল সুস্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছে আমাদের দেখে অন্য পরিবর্তন হবে যথা; (মথি ৫:১৬)। এই বাক্য সুস্পষ্ট ভাবে বলছে আমাদের পবিত্র দেখেই, অপর ব্যক্তি আমাদের আত্মিক জীবন উপলব্ধি করেই ঈশ্বরকে জানার চেষ্টা করবে, আর তখনই ঈশ্বরের মহিমা করবে। যদি না আমরা জগতের মধ্যে হারিয়ে না যাই। নতুন বছর এইভাবে পালন করতে পারেন। অবশ্যই গসপেল ট্রাক ছাপিয়ে অন্যকে ঈশ্বর/ যীশুর আনন্দের সুসমাচার শুনাতে পারেন। আর শ্রুতাদেরকে নতুন বছর অভিনন্দন জানতে পারেন। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেতে পারেন জ্ঞানের বিষয় নিয়ে। জাগতিক জ্ঞান নয় আত্মিক জ্ঞান, যেই জ্ঞান দিয়ে ঈশ্বরের মহিমা হয়। অবশ্যই আপনি আপনার পরিবারে সাথে সময় কাটাতে পারেন, তা পিকনিক হোক আর যাই হোক। নতুন বছরে নানাভাবে উদযাপিত করা যেতে পারে। কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখতে হবে এমন কিছু না করি যা বাইবেলের বিরুদ্ধে প্রভুত্ব করে।
পাদটীকাঃ
0 মন্তব্যসমূহ
আপনাদের কিছু প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই
আমাদের জানান।
ধন্যবাদ ।