“ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার” এ সম্পর্কে বাইবেল কি বলে?
লেখকঃ- এসো বাইবেল শিখি/ শিখুন।
ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার বাইবেল এ সম্পর্কে কি বলে; আজকে আমরা আমাদের নামধারী খ্রিষ্টানদের কথা সম্পর্কে আলোচনা করব। নামধারী খ্রিষ্টান তারা, যারা বলে আমি খ্রিষ্টীয়ান কিন্তু বাইবেল যা বলে অর্থাৎ ঈশ্বর/ যীশু যা বলে তা করে না, তারা তা বিপরীত করে। তারা বলে “ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার” এই সম্পর্কে আমরা বাইবেল ভিত্তিক আলোচনা করব এবং সেই তথাকথিত খ্রিষ্টানদের জবাব দিবো। কিছুদিন আগে, আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি আর্টিকেল পোস্ট করেছিলাম যেটির শিরোনাম ছিল; “খ্রিস্টানরা কি পূজা দেখতে যেতে পারে? যখন এই বিষয়টি পোস্ট করা হয়, তখনই গলায় খ্রিষ্টান নাম বহন করা খ্রিস্টানরা বিস্ময়করভাবে মন্তব্য করতে শুরু করে দেয়, আর বলতে থাকল যে, ধর্ম যে যার হতে পারে, কিন্তু উৎসব সবার। আমরা দেখছিলাম কিছু ভাই ও বোন সেই তথাকথিত খ্রিস্টানদের সমর্থন চলে আসে। তাঁরা ও একই তালে তাল মিলিয়ে বলতে শুরু করে দেয়। এখন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, যারা বাইবেলকে মহত্ত্ব দেয় তবে এই বিষয় সম্পর্কে বাইবেল কি বলে?
এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগে আমাদের উৎসবের ভাষা কী? তা জানা উচিত, তাহলে ফয়সালা যেতে পারি যে এই বিষয় নিয়ে বাইবেল কি বলে।
Image by Jill Wellington from Pixabay |
উৎসব মানে কি?
উৎসব একটি সংস্কৃত জাত। এটি “উৎ” কথার অর্থ উত্থিত এবং সব অর্থ “সমস্ত” অর্থাৎ সমস্ত মানুষের মধ্যে আনন্দ ঐক্য এবং চেতনা উন্মেষ ঘটানো। যেখানে মানুষ একত্রিত হয়ে তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃত এবং মূল্যবোধকে উদযাপন করে। এটি সমাজ ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেখানে হরেক রকম মানুষ, নেচে গেয়ে, হইচই করে উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তোলে। উৎসব নিজে থেকে মন্দ নয়, উৎসব ভালো হয়। কিন্তু আমাদের জানতে হবে উৎসবের প্রতীক কী? যেমন কিছু উৎসব শহিদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বুদ্ধিজীবী দিবস প্রভৃতি। এ উৎসবগুলো যেমন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করা হয় তেমনি সামাজিকভাবেও এগুলো পালন করি। সর্বজনীন উৎসবগুলো আমাদের কাছে জাতীয় উৎসব হিসেবে পরিচিত। এই উৎসব গুলি কখনও খ্রিষ্টানদের দৃষ্টি ভঙ্গি মন্দ নয়। নিঃসন্দেহে এই উৎসব খুশি খুশি সকলে পালন করতে পারে। কিন্তু যেই উৎসব ধর্মীয় সাথে জুড়িত হয় সেটাই খ্রিষ্টানদের দৃষ্টি ভঙ্গি দিয়ে অনুচিত। ঈশ্বর চায় খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীরা অন্য থেকে আলাদা হোক কারণ তারা জীবন্ত ঈশ্বর সদাপ্রভুরই প্রতিনিধি করে থাকেন।
উদাহরণ স্বরূপ বোঝানোর জন্য দুর্গা পুজা। দুর্গা পুজা হল বাঙ্গালি হিন্দুদের সার্বজনীন উৎসব। এই উৎসব সকলের জন্যে, বাঙালি হিন্দুরা দুর্গাকে কন্যারূপে দেখে থাকেন, তাই শরতের এই সময়ে কন্যা তার ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে বাপের বাড়িতে নাইওরি আসার আনন্দে উৎসবে শামিল হয়। এই উৎসব ধর্মীয় উৎসব। হিন্দু সম্প্রদায়ের উত্সবগুলির অধিকাংশ বেদ-পুরাণের দেবদেবী নির্ভর। পরবর্তী কালে লৌকিক দেবদেবীরাও অনেক সময়ই হিন্দু উত্সবের অন্তর্গত হয়েছেন।
অন্য ধর্মের উৎসব সম্পর্কে
যখন উৎসব ধর্মের হয়ে যায় তখন বাইবেল তা পালন করতে বারণ করেন; (১ যোহন ৫:২১)। যদি কোন উৎসব কোনো অংশ পৌত্তলিকতা ঈশ্বরকে সম্মান বা শ্রদ্ধা জানায় এমন কর্মের সাথে জড়িত থাকে, তাহলে খ্রিস্টানদের অংশগ্রহণ করা উচিত নয়। এই ক্ষেত্রে আপস করার কোন সুযোগ নেই।
অন্য ধর্মাবলম্বীর উৎসব পালন সম্পর্কে সাধূ পৌলের মতবাদ
সাধূ পৌল অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালন নিয়ে খুবই সুন্দর একটি আপস কথার উদ্ধৃতি দিয়ে ছিলেন। পৌল কি বলেছিলেন এই বাক্যে দেখুন; (১ করিন্থীয় ১০:১৮)। এখানে পৌল বলছেন; যারা বলিদানের ভোজ খেয়েছে তারা কি সেই বলিদানের যজ্ঞের অংশিদারী হয় না বলো! নিশ্চয় হয়। ধর্মের যখন উৎসব হয় তা সেই ধর্মের বিশ্বাসাবলম্বীদের মহত্ত্ব রাখে। আপনি যখন সেই ধর্মের উৎসব উপভোগ করেন তখন সাধূ পৌলের উদাহরণ মতো তাদের ধর্মের সহভাগী হয়ে পড়েন। আপনি হয়ত পূজা-পাঠ করে থাকেন না। কিন্তু অনুমতি তো দিচ্ছেন। এই কারণেই বাক্য বলে; (২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৫)। এখানে ঈশ্বর পৌল দ্বারা বিশ্বাসীদেরকে জিজ্ঞাসা করতে চান; বিশ্বাসীদের বা ঈমান আনা লোকদের অবিশ্বাসীদের সাথে সম্পর্ক কি? শয়তান আর খ্রীষ্ট কি একই? নিশ্চয় এক নয়, তাই বলছে অবিশ্বাসীদের সেই যোঁয়ালিতে বদ্ধ হওয়া প্রয়োজন নেই। ঈশ্বর আমাদের তাঁর পুএের রক্ত দিয়ে কিনে নিয়েছেন, তাই ঈশ্বর আমাদের আলাদা করতে চায়।
অবশ্যই অন্য ধর্মাবলম্বীদের লোকদের একজন প্রকৃত খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসী হয়ে প্রেম করতে হবে, তাদের হাসি-খুশিত, সুখ-দুঃখ-কান্নায় সহভাগী হবো। কিন্তু যখন ধর্মের (বিশ্বাস) ব্যাপার চলে আসে, তখন তার সঙ্গে সমঝোতা করতে পারি না। আমারা জগতের অক্ষরমালা হিসাবে চলতে পারি না। এটাও ঠিক যখন আমরা খ্রীষ্টকে জানতাম না, তখন জগতের হিসাবে চলতাম। জগত আমাদের যা দেখাতো খুশি খুশি গ্ৰহণ করতাম কিন্তু এখন নয়। নিজেকে জগৎ থেকে আলাদা রাখা প্রয়োজন। আমরা যখন তাদের সাথে মিলে থাকি, তখন বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসীর কোনো পার্থক্য থাকে না। বাইবেল বারংবার বলছে যেন আমার জগতে প্রেম না করে বসি; (১ যোহন ২:১৫, যাকোব ৪:৪)।
যদি বিশ্বাসের সঙ্গে চুক্তি করে, জগতের মধ্যে হারিয়ে যাই, অন্যদের ধর্মের মধ্যে সেখানে গিয়ে খুশি খুঁজার চেষ্টা তবে আমরা ঈশ্বরেরর শক্রু হয়ে দাঁড়াই। কারণ তা আমরা ঈশ্বরের বিশ্বাসের সহিত চুক্তি করছি, যেখানে বাক্যে বলা হয়েছিলো, যে তোমরা তাদের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসো (২ করি ৬:১৭) ঈশ্বর বেরিয়ে আসতে বলছে। বাইবেল বলে আমাদের দেখে অন্যরা পরিবর্তন হতে পারে, তাই আমাদের আগে পরিবর্তন হওয়া উচিত; (মথি ৫:১৬)। এই বাক্যে বলছে আমাদের দেখে অপর পরিবর্তন হবে, এবং আমাদের জীবন্ত ঈশ্বরকে গৌরব করার চেষ্টা করবে। যদি আমরাই বিশ্বাসের সাথে চুক্তি করে বসি, তাহলে আমাদের দেখে অপর কখনও পরিবর্তন হতে পারে। সুতরাং এটা বলা যে, “ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার” তা বলা ভুল। কেন ভুল? তা পূর্বেই বোঝানো হয়েছে। অপরকে খুশি করার চক্করে বিশ্বাসের সঙ্গে চুক্তি করা অনুচিত।
1 মন্তব্যসমূহ
https://www.history.com/topics/religion/history-of-christianity#:~:text=The%20essence%20of%20Christianity%20revolves,messiah%2C%20to%20save%20the%20world.
উত্তরমুছুনPlease read only " Jesus’s Teachings" .
আপনাদের কিছু প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই
আমাদের জানান।
ধন্যবাদ ।