আদৌও কি যীশু খ্রীষ্টের অস্তিত্ব ছিল?
লেখকঃ- এসো বাইবেল শিখি/ শিখুন।
প্রিয়, পাঠক আসুন, আজ আমরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের এই জগতে অস্তিত্ব সম্পর্কে আলোচনা করব।
Image by Thomas from Pixabay |
আমাদের দেশে বিশেষ করে ভারতবর্ষের কথা বলা হচ্ছে। এই দেশে খ্রিষ্টীয় বিশ্বাসীদের (খ্রিষ্টানদের) সম্পর্কে নানা ভুল ধারণা রয়েছে। খ্রিষ্টীয়ান মানে ওই বিদেশী ধর্ম, খ্রিষ্টীয়ান মানেই ইংরেজ, খ্রিষ্টীয়ান মানেই লোকদের ধর্ম পরিবর্তন করার লোক, কোথায় বলতে গেলে কট্টরপন্থী লোকদের ধর্ম পরিবর্তন ভূত-ই ঢুকে গেছে। কট্টরপন্থী লোকেরা খ্রিষ্টীয়ান মানেই চোখে দেখতে পারে না। তখন খ্রিষ্টীয়ানদের নানা ভাবে শাসিত করে থাকে। আপনারা হয়তো শুনেছেন যে, এমন অনেক কট্টরপন্থী রয়েছে যারা খ্রীষ্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলে; আচ্ছা আদৌও কি তোমাদের যীশু এই জগতে ছিলেন তাকি অস্তিত্ব আছে? যীশু খ্রীষ্ট সম্পর্কে কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে? এই রকম নানা প্রশ্ন তুলে ধরে থাকে।
খ্রিষ্টীয়তঃ, আমার প্রিয়, ভ্রাতা ও ভগিনীগণদের জানিয়ে রাখি, আপনাকে এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে, আপনাকে বাইবেলের বাইরে থেকে প্রশ্নে উত্তর যোগ্যতা অর্জন করা প্রয়োজন, তাহলেই সঠিক ভাবে উওর দিতে পারবেন, নচেৎ ঠিক ভাবে উওর দিতে পারবেন না। একজন অবিশ্বাসীর কাছে আমরা কোনভাবে এটা সমর্থন করতে পারি না যে, শুধু বাইবেল থেকেই যীশুর অস্তিত্ব সম্পর্কে উৎসের প্রমাণ দিতে হবে। একজন অবিশ্বাসী বলতে পারে আমার ভাই বা বোন আপনি কাকে ধোকা দিচ্ছেন? এই ধর্মগ্রন্থ তো আপনাদের। আপনারা হয়তো নিজের ধর্মকে শ্রেষ্ঠ দেখার জন্য এখানে নিজের হিসাবে কিছু লিখেও থাকতে পারেন তাই না! তাই আপনি শুধু বাইবেল থেকে প্রমাণ করলে হবে না, আমাকে বাইবেলের বাইরে থেকে প্রমাণ দেখাতে হবে নচেৎ আমি বিশ্বাস করব না, অর্থাৎ আপনি কিছু ঐতিহাসিক প্রমাণ দেখান।৭০ খ্রীষ্টাব্দে রোমীয়দের আক্রমণে যিরূশালেম, এবং অধিকাংশ ইস্রায়েল দেশ ধ্বংস প্রাপ্ত হয়ে ছিল। সেখানকার বসবাসকারী অধিবাসীদের মেরে ফেলা হয়ে ছিল। সমগ্র যিরূশালেম শহর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এক কথায় মাটিতে মিশিয়ে ফেলা হয়েছিল। এই ঘটনাতে প্রভু যীশুর অস্তিত্বের অনেক প্রমাণ ধ্বংস হয়ে যাওয়া নিশ্চয়ই আমাদের জন্য অবাক হওয়ার বিষয় হবে না। প্রভু যীশুকে যারা চোখে দেখেছে, তাদের অনেককেই মেরে ফেলা স্বাভাবিক। এই কারণে প্রভু যীশুর বিষয়ে সাক্ষ্য দেবার জন্য চোখে দেখা জীবিত লোকদের সংখ্যা ছিল সীমিত। আবার, প্রভু যীশুর পরিচর্যা কার্যক্রম রোমীয় সাম্রাজ্যের একটা সীমিত স্থানে ব্যাপকতা পেয়েছিল, তবুও যীশু সম্পর্কিত আশ্চর্য কিছু তথ্যবলী নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক উৎস থেকে পাওয়া সম্ভব হয়েছিল। তাঁর সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রমাণ এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে।
Flavius Josephus যিনি যিহুদী ইতিহাসবিদদের মধ্যে সমধিক খ্যাতিমান ছিলেন। তিনি তাঁর রচিত পুস্তক (Antiquities 18:63-64) প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সম্পর্কে এই ভাবে বিবৃতি দিয়েছেন। সেই সময়ে যীশু নামে একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু তাকে আইনগতভাবে একজন মানুষ বলা যেতে পারে কিনা; কারণ তিনি এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যিনি অনেক অলৌকিক কাজ করেছিলেন। তিনিই মশীহ বা উদ্ধারকর্তা। মৃত্যুর তিন দিন পর তিনি জীবিত হন। এবং অনেকের সাথে দেখা করেছিলেন, যা কি-না ভাববাদীগণ আগেই ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন; তাঁর সম্পর্কে দশহাজার আশ্চর্য বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। কোন এক স্থানে তিনি উল্লেখ করেছেন, “এই সময় একজন জ্ঞানী লোক ছিলেন যাকে যীশু বলা হত। তাঁর আচরণ ভাল ছিল এবং তিনি পুণ্যবান/ পবিত্র হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ইহুদী ও অন্যান্য জাতির মধ্য থেকে বহু লোক তাঁর শিষ্য হয়েছিল। পীলাত তাঁকে ক্রুশে ও মেরে ফেলার জন্য নিন্দা করেছিলেন। আর যারা তাঁর শিষ্য হয়েছিল তারা তাঁর প্রতি তাদের আনুগত্য ত্যাগ করেনি। তারা জানিয়েছে যে তাঁর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার তিন দিন পরে তিনি তাদের কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং তিনি জীবিত ছিলেন। সেই অনুসারে তারা বিশ্বাস করেছিল যে তিনিই সেই মশীহ, যার বিষয়ে ভাববাদীরা আশ্চর্য কথা বলেছিলেন।
এছাড়া প্রথম শতাব্দিতে রোমীয় ঐতিহাসিকবিদ Tacitus যাকে প্রাচীন পৃথিবীর সঠিক ইতিহাস রচয়িতা বলে বিবেচনা করা হয়। Tacitus কোন খ্রিষ্টীয়ান ছিলেন না। তিনি তাঁর রচিত পুস্তক খ্রীষ্টিয়ানদের” (খ্রীষ্টের ল্যাটিন শব্দ খ্রীষ্টুস থেকে) সম্পর্কে বলেছেন যে, খ্রীষ্ট তিবিরিয়ার শাসনকালে পন্তীয় পীলাতের অধীনে অত্যাচারিত হয়েছিলেন।
(Annals 15.44) জুলিয়াস আফ্রিকানুস নামে একজন ইতিহাসবিদ থালুসের উদ্ধৃতি তুলে ধরে খ্রীষ্টের ক্রুশে মৃত্যুবরণের সময়ে অন্ধকার ঘনিয়ে আসার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
দ্বিতীয় শতাব্দির গ্রীক লেখক Lucian of Samosata স্বীকার করেছেন যে, খ্রীষ্টিয়ানরা যীশুর উপাসনা করে, যাঁকে তাদের জন্য ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি নতুন শিক্ষার প্রচলন করেছিলেন। তিনি বলেছেন যে, যীশুর শিক্ষাগুলিতে বিশ্বাসীদের ভ্রাতৃত্ববোধ, মন পরিবর্তনের গুরুত্ব এবং অন্যান্য দেবতাদের ছেড়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
খ্রীষ্টিয়ানেরা যীশুর দেওয়া আইন-কানুন মতই চলত, তারা অমরত্বে বিশ্বাসী এবং মৃত্যুর শাস্তিতে বিশ্বাসী; স্বেচ্ছায় আত্ম নিবেদন এবং জাগতিক সম্পদ বর্জন করাও তাদের শিক্ষার বৈশিষ্ট্য ছিল। Pliny the Younger (10:9) তাঁর লেখা পএে খ্রীষ্টিয়ানদের উপাসনা পদ্ধতি বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেছেন এবং এও যোগ করেছেন যে, খ্রীষ্টিয়ানরা যীশুকে ঈশ্বর বলে উপাসনা করে থাকে, যা খুবই নৈতিক। তাছাড়া, তিনি যীশুর স্থাপিত প্রভুর ভোজ ও প্রীতিভোজের কথা তুলে ধরেছেন। একজন Philosopher যার নাম Mara bar Serapion নিশ্চিত করেছে যে, যীশুকে একজন বুদ্ধিমান ও ধার্মিক লোক মনে করা হোত এবং অনেকে তাঁকে ইস্রায়েলের রাজা বলে বিবেচনা করতেন। ইহুদীরা তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল, যদিও অনেকেই তাঁর অনুসারীদের শিক্ষা দিয়ে জীবনযাপন করেছিলেন। তাছাড়াও ব্যাবিলনীয় তালমুদ (Sanhedrin 43a) নিস্তারপর্বের প্রারম্ভিক কালে যীশুর ক্রুশবিদ্ধকরণ এবং ইহুদিদের দ্বারা জাদুবিদ্যা এবং ধর্মত্যাগের মশীহের অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
ধর্মনিরপেক্ষ ও বাইবেলের ইতিহাসে উভয় স্থানেই যীশু খ্রীষ্টের অস্তিত্ব সম্পর্কে বহু প্রমাণ রয়েছে যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বাস্তবে অস্তিত্ব ছিল। যীশুর অস্তিত্ব সম্পর্কিত সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, প্রথম শতাব্দির হাজার হাজার খ্রীষ্টয়ানেরা এবং তাঁর বারোজন শিষ্যেরা, যারা যীশু খ্রীষ্টের জন্য জীবন দিয়ে শহীদ হতেও পিছপা ছিল না। শিষ্যদের কঠোর থেকে কঠোর মৃত্যুর দণ্ডিত দেওয়া হয়েছিল। লোকেরা যা সত্যি করে বিশ্বাস করে, তার জন্য মৃত্যুবরণ করতে পিছপা হয়নি।
ঈশ্বর সকলকে আশীর্বাদ করুন।।
0 মন্তব্যসমূহ
আপনাদের কিছু প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই
আমাদের জানান।
ধন্যবাদ ।