Header Ads Widget

Responsive Advertisement

প্রভু ভোজ কি?// What is the Lord's Supper?

প্রভু ভোজ কী?

লেখকঃ- এসো বাইবেল শিখি/ শিখুন।

প্রভুর ভোজের আলোচনা, একদিকে, আত্মাকে আলোড়িত করে, কারণ এতে গভীর অর্থ রয়েছে। এটি একটি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা নিস্তারপর্ব উদযাপন করার সময় প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তাঁর মৃত্যুর শেষ মুহুর্তে শুরু করেছিলেন, যা আমরা আজও উদযাপন করি। এই অনুষ্ঠানটিও খ্রিস্টান উপাসনার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।  এই উদযাপনের মাধ্যমে আমরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু ও পুনরুত্থান এবং ভবিষ্যতে তাঁর মহিমান্বিত দ্বিতীয় আগমনকে স্মরণ করি। তাহলে একটু জানা যাক প্রভু ভোজ সম্পর্কে।

Image by Freepik 

বাংলা ভাষায় প্রভুর ভোজ কি? (What is the lord's supper in bengali language)

যখন কোন বিশ্বাসী, প্রভু যীশুর বলিদানেকে স্বরণ করার জন্য এক জায়গায় সমবেত হয়। সমবেত হয়ে প্রভু যীশুর, বলিদানকে স্বরন করার জন্য রুটিকে ভেঙে, ভাগ করে গ্ৰহন করেন, আর দ্রাক্ষারস অর্থাৎ আগুরের রস যা অ্যালকোহল বিহীন, রসকে ভাগ করে পান করা হয়। প্রভু যীশুর সেই বলিদান থেকে উদ্ধার পাওয়ার আনন্দকে উপভোগ করাকেই প্রভু ভোজ বলা হয়। 

প্রভুর ভোজ কি অলৌকিক ক্ষমতা আছে? (Does the Lord's Supper have miraculous powers?) 

অনেক লোক মনে করে প্রভু ভোজে, কোন একটি চমৎকার শক্তি আছে। আপনাদের বলি তা কিন্তু নয়। প্রভু ভোজেতে কোন প্রাকৃতিক/ চমৎকার শক্তি নেই। প্রভু ভোজ শুধুু স্বরণ করার উদ্দেশ‍্য নিতে বলা হয়েছে যথা; (লুক ২২:১৯-২০)। ইংরেজিতে প্রভু ভোজকে Lord's supper/ Communion ও বলা হয়ে থাকে। Communion শব্দটি ইংরেজি বাইবেল KJV অনুবাদে পাওয়া যায়। (1 Corinthians 10:16 KJV). এই Communion গ্ৰীক শব্দ κοινωνία উচ্চারণ  koinonia থেকে এসেছে। যার অর্থ হল; ভাগ করে নেওয়া, আধ্যাত্মিক সহভাগিতা, অংশগ্রহণ করা, অংশিদারী হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি বোঝায়। প্রভু ভোজ হল একটি প্রভু যীশুর ক্রুশে বলিদান এর চিন্থ। প্রভু ভোজের ছায়া পুরাতন নিয়মেও দেখতে পাওয়া যায় যথা;(যাত্রাপুস্তক ১২ অধ্যায়)। এই ১২ অধ্যায়কে বুঝতে গেলে আমাদের এই অধ্যায়ের পটভূমি জানতে হবে। সংক্ষেপে এই ১২ অধ্যায়ের পটভূমি আলোচনা করা হচ্ছে। 

পটভূমিঃ- অব্রাহামের ঈশ্বর, ইসহাকের ঈশ্বর, যাকোবের ঈশ্বর, তিনি আপন পবিত্র প্রজা মিসরস্ত থাকা ইস্রায়েলদের প্রতি দুঃখ, কষ্ট, যাতনা, দেখে ছিলেন। তিনি চেয়ে ছিলেন তাঁর পবিত্র প্রজা ইস্রায়েলদের মিস্রীয়দের হস্ত থেকে রক্ষা পায়। আর আপন দাস অব্রাহামের প্রতি প্রতিজ্ঞা করা সেই দুগ্ধমধূপ্রবাহী দেশ যেন দেন‌। এবং ঈশ্বর চেয়ে ছিলেন যেন ইস্রায়েল জীবন্ত ঈশ্বরের সেবা করে। তখন ঈশ্বর মোশিক মনোনীত করেন। ঈশ্বর মোশিকে ফৌরণের কাছে পাঠিয়ে ছিল যেন, ফৌরণ ঈশ্বরের মনোনীত পবিত্র প্রজা ইস্রায়েলদেরকে তাঁর, সেবা করার জন‍্য ছেড়ে দেয়। কিন্তু ফৌরণের মনে এত গর্ব অহংকার জমে গেছিল, যার ফলে ঈশ্বরের পবিত্র প্রজা ইস্রায়েলদের ছাড়তে অস্বীকার করেন। তখন ঈশ্বর ফৌরণকে তাঁর পরাক্রম দেখাতে চাইছিল, জীবন্ত ঈশ্বরকে বা তাঁর পবিত্র প্রজাদের হালকায় নিলে কি হয় বলে! তখন ঈশ্বর সমগ্ৰ মিসরে কিছু বিপত্তি নিয়ে আসে। মনে রাখবেন ফৌরণ কোন ব‍্যক্তির নাম নয় যেমন সমালোচরা বলে বেড়ায়। ফৌরণের হিব্রু নাম (פַרְעֹה-Paroh) যার অর্থ; (প্রাচীন মিশরের রাজার উপাধি)। ঈশ্বর শেষ বারের মতো দশম আঘাত নিয়ে আসেন। সেই দশম আঘাত থেকে ঈশ্বর ইস্রায়েলদের রক্ষা করার জন্য মোশি ও হারোণকে আজ্ঞা দিলেন ও নিস্তারপর্ব্ব স্থাপন করতে বললেন যেমনটি এই বাক্য বলে; (যাত্রাপুস্তক ১২:৫-৭)। 

এই বাক্যেয় ঈশ্বর মোশি ও হারোণকে বললেন, তোমরা একটা নির্দ্দোষ মেষশাবক নাও। নির্দ্দোষ বলতে যার কোন খুঁত নেই। আপনারা হয়তো দেখেছেন, কিছু কিছু মেষ বাচ্চারদের জন্ম থেকে পা নেই, যদিও পা আছে তাও আবার তেড়া-বাঁকা রয়েছে। কোথায় আবার শরীর একাধিক চামড়া গজিয়েছে। কোথায় আবার চোখ কানা, চোখের সাহায্য দেখতে পারেন না। কোথায় আবার কান তেড়া ইত্যাদি ইত্যাদি খুঁত রয়েছে। ঈশ্বর এই ধরনের মেষশাবকে নিতে না বলছেন, যেন মেষশাবক নিখুঁত হয়। তাও আবার প্রথম বছরের মদ্দা/ পুরুষ/ পুংশাবক হয়। আর সেই মেষশাবদের নিয়ে ইস্রায়েলীয় কেটে খাবে। কিন্তু যেই ঘরে মেষশাবকদের খাওয়া হচ্ছে, সেই ঘরে যেন ইস্রায়েলীয়রা সেই মেষশাবকদের রক্ত ঘরে দুই চৌকাঠের এবং উপরে অংশে রক্ত লাগিয়ে দেয়। ঈশ্বর রক্ত লাগাতে কেন বলছেন কি? কারন ঈশ্বর যখন দশম আঘাত নিয়ে আসবেন, তখন মিশরের যত বাচ্চা আছে তিনি সকলকে মেরে ফেলবেন। কিন্তু যেই ঘরে সেই রক্ত লাগানো থাকবে তা দেখে ঈশ্বর ছেড়ে দিবেন যেমন বাক্য বলে; (যাত্রাপুস্তক ১২:১২-১৩)। 

অতএব পুরাতন নিয়মে ঈশ্বর/ সদাপ্রভু যখন দণ্ড দিতে চেয়েছিলেন। তখন সেই মেষশাবকদের বলিদানের রক্ত যেই যেই ঘরে লাগানো ছিল তা দেখেই ঈশ্বর তাদেরকে ছেড়ে দিলেন। অর্থাৎ সেই রক্ত তাদেরকে রক্ষা করল। পরে ঈশ্বর মোশির দ্বারা মানুষের পাপের জন্য পশুদের বলিদান শুরু করে দেন। যেই বলিদান শুধু মাত্র একটি ছায়া ছিল, যা ঈশ্বরের পুত্র অন্তিম ও সম্পূর্ণ বলিদান দিতে যাচ্ছিলেন। এই নিস্তারপর্ব্বীয় উৎসব একটি ছায়া, যেটাতে ইস্রায়েলীয়রা পুশুকে বলিদান করে, সেই পশুর মাংস খেত। ইস্রায়েলদের একটি পবিত্র পর্ব্ব ছিল। ইস্রায়েলীয়দের জন্য এই উৎসব স্বরনীয় ও ছিল, ঈশ্বর কেমন ভাবে দশম আঘাত নিয়ে আসেন। আঘাত নিয়ে এসে মিশরের সকল প্রথমজাতকে আঘাত করেন। কিন্তু শুধু ইস্রায়েলীদের ছেড়ে দিয়ে ছিলেন। কারন ইস্রায়েলীয়রা নিস্তারপর্ব্বীয় মেষের রক্ত তাদের ঘরে দরজার, দুই চৌকাঠের আর উপরে লাগিয়ে ছিল বলে! ঠিক তদ্রুপ ঈশ্বর সেই পশুদের বলিদানকে নূতন নিয়মে সম্পূর্ণ রূপে পরিবর্তন করে দেন। এবং তাঁর পুএ স্বয়ং বলির মেষশাবক হয়ে গেলেন যেমন বাক্য বলে; (যোহন ১:২৯১ করিন্থীয় ৫:৭)। 

বর্তমান এই জগতের মানুষ, যদি কেউ প্রভু যীশুর রক্তকে বিশ্বাস সহকারে গ্ৰহণ করে। ঈশ্বর তাদেরকে অনন্তকালের মৃত্যুর দণ্ড দিবেন না, বরং তাদেরকে অন্তত জীবন দিবেন। যারা যীশুর বলিদানের রক্তকে বিশ্বাস সহকারে গ্ৰহণ করে নেয় যেমন বাক্যে বলে; (যোহন ৫:২৪)। প্রভু যীশু, যখন তাঁর শিষ্যদের সাথে শেষ বারের মতোন নিস্তারপর্ব্ব পালন করছিলেন। এবং শিষ্যদের সাথে যখন ভোজন গ্ৰহণ করেছিলেন, তখন ভোজন করার জন্য তাদের কাছে সকল ধরনের বন্দোবস্ত ছিল। যখন প্রভু যীশু তাঁর শিষ্যদের সাথে গ্ৰহণ কর ছিলেন, তখন প্রভু যীশু কি বলে ছিলেন এই বাক্যে দেখুন; (লুক ২২:১৯-২০)। 

এখানে প্রভু যীশু প্রত‍্যেক বিশ্বাসীদেরকে, প্রভু ভোজ করার জন‍্য আজ্ঞা দিয়েছেন। কিন্তু কেন তা সুস্পষ্ট ভাবে বলছে। কি বলল? বাক্যে বলল স্বরন করার জন‍্য। তিনি কত দুঃখ, কষ্ট, অপমান, লাঞ্চনা সহ্য করেছিলেন। এমন কি তিনি আত্মিক ভাবেও কিছুক্ষনের জন‍্য পিতার কাছ থেকেও আলাদা হয়ে গেছিলেন অর্থাৎ পিতা তাঁহাকে পরিত‍্যাগ করেছিল যেমন বাক্যে বলে; (মার্ক ১৫:৩৪)। প্রভু ভোজে রুটি এটা চিহ্ন স্বরুপ, যেটা প্রভুর যীশুর শরীর যা আমাদের জন‍্য বলিদান করে ছিলেন। আর দাক্ষারস যেটা প্রভু যীশুর রক্ত যা আমাদের জন‍্য ঝরিয়ে ছিলেন। যখন আমরা রুটি ভোজন করি আর দ্রাক্ষারস/ আংগুর রস পান করি তার চিন্থ হল; সকল বিশ্বাসী প্রভু যীশুর দেহের এক অংশিদারী। সকল বিশ্বাসী নিয়ে আমরা একটি প্রভুর দেহ। একদিন যিহূদীরা নিজেদের মধ্যে যীশুর কথা শুনে বাদানুবাদ করছিল। তখন যীশু যিহূদীদের কি বললেন এই বাক্যে দেখুন; (যোহন ৬:৫৩যোহন ৬:৫৪)। 

পুরাতন নিয়মে যেমন নিস্তারপর্ব্ব/ তাড়ী শূন্য রুটির পর্ব্ব পুষানুক্রমে চিরস্থায়ী বিধি মতে এই উৎসবকে পালন করার আজ্ঞা ছিল। তদ্রূপ নূতন নিয়মে প্রভুর ভোজকে স্বরন করার জন্য, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আজ্ঞা দিয়েছেন। তাই সাধূ পৌল খুবই সুন্দর একটি কথা বলেন, কি কথা বলেন তা এই বাক্যে দেখুন; (১ করিন্থীয় ১১:২৬)।

ঈশ্বর সকলকে আশির্বাদ করুন। আমেন।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ