যীশু কখনও সাফ আলফাজে বলেছিলেন আমি ঈশ্বর?
লেখকঃ- এসো বাইবে শিখি/ শিখুন।
আমরা সমালোচকদের একটি দুর্দান্ত যুক্তি দেখি, যে তারা বলে যে যীশু কি কখনও নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবী করেছেন এই প্রশ্ন আমাদের প্রিয় মুসলিম ভ্রাতা ও ভগিনীগন নিয়ত করেই থাকেন। মুসলিমদের Scholar (পণ্ডিত) Dr.Zakir Naik করেই থাকেন। তিনি তো উল্টো আবার বলেন, যদি কেউ বাইবেলে দেখাতে পারেন তবে আমি খ্রিস্টান ধর্ম্ম গ্ৰহণ করতে ইচ্ছুক। উনার প্রশ্ন করার ভিড়িও দেখলে হাসি ও লাগে, খারাপ ও লাগে। কারণ উনি কি যে বলেন উনি তার ঠিক ঠিকানাই খুঁজেই পান না। উনার, এই দাবি সমস্ত জগতে খুবই আলোচনায় থাকেন। সেটি আমাদের দেশ তা ভারতবর্ষ হোক বা বাংলাদেশ। তাছাড়া উনার এই দাবীর, জন্য তিনি সমগ্র জগতে খুবই এক্সপোস হয়ে থাকেন যা কখনও বলা সম্ভব নয়। প্রিয়রা যদি এই প্রশ্ন সমালোচরা জিজ্ঞাসা করেন, তো সমালোচকে প্রশ্ন করার দৃষ্টি ভঙ্গি একটু জানা প্রয়োজন। এবং আপনি তাকে এটাও জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে, আপনি কি বিশ্বাস করেন বাইবেল ঈশ্বরের বাক্য/ জীবন্ত ঈশ্বরের লিখিত পুস্তক বলে! যদি বলে না তবে
আপনি তাকে বলতে পারেন যে আমি যদি আপনাকে পুরো বাইবেল দেখাই, তবুও আপনি বিশ্বাস করতে চাইবেন না যে প্রভু যীশু ঈশ্বর! হয়তো কিছু লোক হ্যাঁ বলতে পারে। কিন্তু তারা তাদের মন থেকে তা মানতে রাজি নয়। এই ধরনের লোকেদের কাছে বাইবেলে লেখা কথাগুলোর কোনো গুরুত্ব নেই। প্রিয়রা যীশু কি কখনও নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবী করেছেন এর উত্তর জানবো।
যীশু কি কখনও নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবী করেছেন
এর উওর হল হাঁ প্রভু যীশু খ্রীষ্ট নিজেকে ঈশ্বর দাবী করেছেন। কিন্তু সেই পরিভাষার উওর পবিত্র আত্মা বিহীন কেউ বুঝতে সক্ষম হয়ে উঠতে পারে না। যীশুই যে ঈশ্বর তার প্রমাণ যথা; (যোহন ১:১, ১:১৪)। হয়তো এই বাক্য দেখে মনে করছেন কই এখানে তো প্রভু যীশু নিজেকে সাফ আলফাজে ঈশ্বর দাবী তো করেননি। হাঁ আপনার চিন্তাধারা ন্যায্য। এখানে প্রভু যীশু নিজেকে ঈশ্বর দাবী করেননি। এই বাক্যে তুলে ধরার কারণ হচ্ছে প্রভু যীশু কে ছিলেন? তাঁর অস্তিত্ব কি? তাঁর পরিচয় এই বাক্যেয় দেখা যায়। সুতরাং প্রভু যীশুই ঈশ্বর ছিলেন। এবং প্রভু যীশু যেই শিষ্যকে অধিক প্রেম করতেন সেই শিষ্য যোহন তাঁর পএে যীশুই যে ঈশ্বর ছিলেন তা দাবী করেন যেমন বাক্য বলে যথা; (১ যোহন ৫:২০ BCV)। তিনিই প্রকৃত ঈশ্বর এবং অনন্ত জীবন। সুতরাং এই বাক্যে থেকে ও প্রমানিত যে, প্রভু যীশু নিজেই ঈশ্বর ছিলেন। এখনও মনে মনে ভাবছেন যীশু স্বয়ং কোথায় বলেছেন আমি ঈশ্বর সেই শুদ্ধ আলফাজটির বাক্যেটি দেন অন্যথা নয়।
প্রিয় এত অধৈর্য হয়ে উঠছেন কেন? আপনাকে সেই বাক্যে দেওয়া হবে যেখানে প্রভু যীশু স্বয়ং ঈশ্বর বলেছেন।
Jesus and the Samaritan woman (যীশু এবং শমরীয়া স্ত্রী)
যীশু যখন শমরিয়ার স্ত্রীলোকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। কথা বলার সময় যীশু সেই স্ত্রীলোকের সব কিছু বলে দিচ্ছিলেন, তখন সেই শমরিয়ার স্ত্রীলোক শুনে অবাক হয়ে যান। স্ত্রীলোকটি বলল দেখছি আপনি ভাববাদী। কথা বলতে বলতে স্ত্রীলোক ঈশ্বরের আরাধন সম্বন্ধে কথা বলে, তখন প্রভু যীশু সেই স্ত্রীলোকে আরাধন সম্বন্ধে বিস্তারিত বোঝান যে, ঈশ্বরকে কিভাবে আরাধনা করা উচিত। তখন স্ত্রী লোকটি বলল, আমি জানি মশীহ আসছেন, যাকে খ্রিষ্ট বলা হয়, তিনি যখন আসবেন সব কিছু আমাদের জানাবেন। তখন প্রভু যীশু উওরের সেই শমরিয়ার নারীকে কি বলেছিল কি? এই বাক্যে দেখুন; (যোহন ৪:২৬) আমি, আমিই তিনি। এখানে প্রভু যীশু সেই শমরিয়ার স্ত্রীলোকে বোঝাতে চাইছিলেন যে, তোমরা যেই মশীহ বা খ্রিষ্টর জন্য অপেক্ষা করছো তা স্বয়ং আমিই তিনি। মানে এখানে প্রভু যীশু ঈশ্বর হওয়ার ঘোষণা করছেন। যীশুই যে ঈশ্বর ছিলেন তার পরিচয় যিহুদীদেরকে নানা ভাবেও দিতেন একদিন প্রভু যীশু যিহুদীদের তাঁর মৃত্যুর সম্বন্ধে ভবিষ্যৎ বানী সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি কি বলেন এই বাক্যে দেখুন; (যোহন ৮:২১)।
প্রভু যীশু এই কথা শুনে ইহুদীরা বললেন, "সে কি আত্মহত্যা করবে?" এ যে বলছে আমি যেখানে যাব, সেখানে তোমরা যেতে পারবে না। প্রভু যীশুর এই উক্তিটির কথা যিহুদীরা বুঝতে পারেনি। তিনি ইহুদিদের বোঝাতে চেয়েছিলেন যে আমি সমগ্র মানব জাতির পাপের জন্য ক্রুশবিদ্ধ হব, অর্থাৎ ক্রুশে মারা যাব এবং কবর হবো, কিন্তু কবর থেকে তিন দিন পর আবার উঠব, এবং স্ব-শরীরে সহ স্বর্গে নিত হব। কারণ আমিই ঈশ্বর ছিলাম। ঈশ্বরের কোন মৃত্যু হয় না তা তোমাদের প্রমাণ সহকারেও দেখাব। সুতরাং তোমরা পাপ রহিত আমার কাছে আসতে পারবে না যেমন যীশু বলেন; (যোহন ৮:২৪)। এই বাক্যেয় প্রভু যীশু স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনিই একমাত্র ঈশ্বর ছিলেন। তিনিই যে ঈশ্বর তার প্রমাণ প্রভু যীশুর মুখ হইতে নির্গত তাঁর মৃত্যুর ভবিষ্যৎবাণী প্রমাণ হিসাবে।
প্রভু যীশু নিজের মৃত্যুর ভবিষ্যৎবাণী
প্রভু যীশুর স্বয়ং মৃত্যুর ভবিষ্যৎ বাণী যথা; (মথি ১৬:২১, মার্ক ৮:৩১, লূক ৯:২২, যোহন ২:১৯, লূক ১৮:৩৩-৩৪)। এই সব বাক্যের হিসেবে এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়ে যায়। কোন মানুষ কি নিজের মৃত্যু কি ভাবে হবে? কেন হবে? কোথায় হবে? তা কি বলতে পারবে? নিশ্চয়ই না। যদি তিনি ঈশ্বর না হতেন, তাহলে তিনি নিজের মৃত্যুর ব্যাপারে কিভাবে নিখুঁত ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন? সুতরাং প্রভু যীশুর মুখ হইতে নির্গত বাক্য দ্বারা প্রমাণিত হয় তিনিই ঈশ্বর ছিলেন। কিন্তু কিছু লোক বা সমালোচকেরা চিৎকার করে বেড়ায় যীশু এক পেগাম্বর/ নবী/ ভবিষ্যৎদাতা ছিলেন।
যীশু যিহুদীদেরকে মশীহ প্রমাণ
এক দিন যখন যিহুদীরা প্রভু যীশুর সঙ্গে বাদানুবাদ করছিলেন তখন যিহুদীরা প্রভু যীশুকে কি জিজ্ঞাসা করেছিলেন এই বাক্যে দেখুন; (যোহন ৮:৫৩)। প্রভু যীশু এই বাক্যের উওরে কি বললেন সেই এই বাক্যে দেখুন; (যোহন ৮:৫৬-৫৭)। প্রভু যীশু স্পষ্ট রুপে যিহুদীদেরকে বলেছিল যে, অব্রাহাম যাকে দেখেছিল সেই আমিই ছিলাম। আমাকে দেখে অব্রাহাম অনেক খুশি হয়েছিল। যীশুর কথা শুনে যিহুদীদের প্রতিক্রিয়া ছিল এটা কি করে সম্ভব তোমার তো ৫০ বছর হয়নি আর তুমি অব্রাহামকে দেখেছো। যীশু স্পষ্ট রুপেই জানায় যেমন বাক্য বলে; (যোহন ৮:৫৮)। প্রভু যীশু সাফ আলফাজে বলেছিলেন অব্রাহাম যাকে দেখেছিল সেই আমি ছিলাম অর্থাৎ যীশু বলছিলেন আমিই ঈশ্বর। একই কথা ঈশ্বর যখন মোশিকে হোরে পর্ব্বতে ঝোপের আগুনের মধ্যে থেকে দেখা দিয়েছিলেন। এবং মোশিকে ইস্রায়েলের লোকদের মিসর দেশে থেকে বের করে আনার জন্য নিয়োগ করেছিলেন। তখন মোশি ঈশ্বরকে তাঁর নাম জিজ্ঞাসা করেছিল। যদি ইস্রায়েলের লোকেরা আমায় জিজ্ঞাসা করে যে, যেই ঈশ্বর তোমায় প্রেরণ করছেন সেই ঈশ্বরের নাম কি? তখন আমি কি বলবো?
তখন উওরের ঈশ্বর মোশিকে কি নাম বলেছিল এই বাক্যে দেখুন; (যাত্রাপুস্তক ৩:১৪)। এখানে ঈশ্বর অর্থাৎ (אֱלֹהֵ֧י-elohim) “আমি আছি” কথাটি বলেছিলেন। প্রভু যীশু ও এই একই উক্তি নতুন নিয়মে বলে ছিলেন “আমি আছি” প্রভু যীশু এই নামে কেন নিজেকে সেই সময়ে সম্বোধন করেছিলেন? প্রভু যীশু এই কারণে নিজেকে সম্বোধন করেছিল। প্রভু যীশু ভালো করে জানত যে, এই নাম “আমি আছি” শুধুমাত্র যিহুদীদের ঈশ্বর (אֱלֹהֵ֧י-elohim) সদাপ্রভু (יְהוָ֔ה-Yahweh) নাম। প্রভু যীশু এই নাম নিজেকে সম্বোধন করে যিহুদীদের এক সুযোগ দিচ্ছিল এবং বোঝাতে চাইছিলো যেন যিহুদীরা তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে চিনতে পারে। কিন্তু কি হল যেই রকম প্রভু যীশু সেই নাম নিজের জন্য ব্যবহার করেন, উল্টো লোকে তাঁকে পাথর মারার জন্য পাথর তুলে নিয়েছিল। কারণ তাদের হিসাবে তারা মনে করছিলো যে প্রভু যীশু তাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর নাম নিন্দা করছিল। তখনকার দিন যিহুদীদের ঈশ্বরের নাম কেউ নিন্দা করলে এটা প্রচলন ছিল যে, জীবন্ত সেই ব্যক্তিকে পাথর দিয়ে মারা হবে যেমন বাক্য ও বলে যথা; (লেবীয় ২৪:১৬)।
আমি আছি কথার অর্থ কি?
আমি আছি এই কথার অর্থ হচ্ছে স্বয়ং উপরে বিদ্বমান, স্বয়ং উপরে নির্ভরশীল, স্বয়ং থেকে রক্ষা করা। অর্থাৎ তিনি এমন এক ঈশ্বর যিনি আদি ও অন্ত মানে যার কোন শেষ নেই। তাঁকে কেউ সৃষ্টি করেননি, তাঁর অস্তিত্ব স্বয়ং থেকে। যিনি ছিলেন, যিনি আছেন, যিনি থাকবেন। যাঁকে কারোর উপরে নির্ভর করতে হয় না। তিনি সৃষ্টির মধ্যে পড়ে না। যীশু যে ঈশ্বর ছিলেন তা তিনি মৃত্যু থেকে পুনর্জীবিত হয়েও তা প্রমাণ করে ছিলেন যে, “আমি আছি” তাই প্রভু যীশু বলেছিলেন আমি আর পিতা এক বলে যথা; (যোহন ১০:৩০)। এই বাক্যেয় ও প্রভু যীশু তিনি যে, ঈশ্বর ছিলেন তা স্বয়ং সাফ আলফাজে স্বীকার করেন/ বলেছিলেন।
Jesus appears to the disciples after his resurrection in Bengali
এক দিন যখন প্রভু যীশু মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠে শিষ্যদের দেখা দেন। পরে যখন স্বর্গে স্ব-শরীরে যাচ্ছিলেন যাওয়ার পূর্বে সমস্ত শিষ্যদের একটির কথা বলছিলেন। যেটাকে মানবজাতির পাপ হইতে মুক্তির শুভ সুসমাচার বলা হয়। প্রভু যীশু তাঁর অনুসারীদের এক বিশাল অটুট প্রতিজ্ঞা করেছিলেন কি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন জানতে এই বাক্যে দেখুন; (মথি ২৮:২০)। এই বাক্য প্রভু যীশু শিষ্যদের বলছেন দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি। যদি প্রভু যীশু ঈশ্বর না হতেন। তবে এই প্রতিজ্ঞাই বা কেন করেছিল? প্রভু যীশুর কি ক্ষমতা আছে যে তিনি সময়ের শেষ পর্যন্ত প্রতিদিন থাকবেন! যার দ্বারা এটা প্রমাণিত যে তিনি ঈশ্বর ছিলেন; (প্রকাশিত বাক্য ১:৭-৮)।
উপসংহার
খ্রীষ্টের প্রিয়ো ভাইবোনেরা আমরা বাইবেলে জানলাম যীশু কি কখনো নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করেছেন এটা ঠিক বাইবেলে নির্দিষ্টভাবে লেখা হয় নাই যে, যীশু বলেছেন-‘আমিই ঈশ্বর’ কিন্তু ঈশ্বর পরোক্ষভাবে তিনি বিভিন্ন উপায়ে ঈশ্বর হওয়ার দাবি করেছিলে। হ্যাঁ, নিজের প্রতি ঈশ্বরের নাম ও গুণাবলী প্রয়োগ সহ অনেক উপায়ে। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে তিনি ঈশ্বর ও অবতার, তাঁর কথার দ্বারা, তাঁর অলৌকিক কাজগুলির দ্বারা এবং অবশেষে মৃতদের মধ্য থেকে তাঁর পুনরুত্থানের মাধ্যমে এটি প্রমাণ করে৷ যীশু ঈশ্বর ছিলেন।
ঈশ্বর সকলকে বোঝার মতোন শক্তি প্রদান করুন।।
0 মন্তব্যসমূহ
আপনাদের কিছু প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই
আমাদের জানান।
ধন্যবাদ ।